করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা প্রতিরোধে দফায় দফায় বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। অনেকের মতে, দেশের জনগণের জন্য এই মুহূর্তে অন্যান্য প্রকল্পের উন্নয়নের চেয়ে করোনার ভ্যাকসিন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা বেশি প্রয়োজন। তাই বিশেষজ্ঞগণ অতি দ্রুত ভ্যাকসিন সম্পূর্ণ করার পরামর্শ দিয়েছেন। দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের কওমি শিক্ষার্থীদের জন্য ভ্যাকসিন দিতে বা নিতে কোনো রকম উদ্যোগ বা আগ্রহ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি। বর্তমান সময়ে ভ্যাকসিন নিয়ে কওমি শিক্ষার্থীদের সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরেছেন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
রোগপ্রতিরোধে ভ্যাকসিন গ্রহণ শরীয়াহসম্মত
হাবিব আনওয়ার
শিক্ষার্থী, দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসা, চট্টগ্রাম
রোগপ্রতিরোধের জন্য অগ্রিম প্রতিষেধক গ্রহণ করা হাদিস থেকে প্রমাণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছেন। সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, সেদিন কোন ধরনের বিষ ও যাদু তাকে ক্ষতি করবে না।
এই হাদিস থেকে অগ্রিম প্রতিষেধক গ্রহণ করার বিষয়টি প্রমাণিত। তবে বর্তমান করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণ করা নিয়ে যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রে বলবো, যথেষ্ট গবেষণার পর আন্তর্জাতিক স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানগুলো করোনার বেশ কিছু প্রতিষেধক আবিষ্কার করেছে। উন্নত দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এ ভ্যাকসিন নিচ্ছে। ফলে শরীরে শক্তিশালী এন্টিবডি তৈরি হচ্ছে। অধিকাংশ মানুষ নিরাপদ থাকছে।
তবে প্রত্যেক ক্রিয়ারই প্রতিক্রিয়া রয়েছে। সেই হিসেবে ভ্যাকসিনেরও প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকের জ্বর, মাথাব্যথা, বমিও হচ্ছে। ডাক্তারগণ বলছেন, এতে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। অনেকের শরীরে ম্যাচ করতে সময় লাগার ফলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। আবার অনেকে প্রথম কিংবা দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার পরও করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। এসব ঘটনায় স্পষ্ট, ভ্যাকসিন মানেই সম্পূর্ণ নিরাপদ সেটা নয়। তবে ভ্যাকসিন গ্রহণকারিদের আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার তুলনামূলক কম। তাই উচিত হবে দ্বীনদার অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ভ্যাকসিন গ্রহণ করা।
স্বাভাবিক দৃষ্টিতেই ভ্যাকসিন নেয়া উচিত
উসমান বিন আঃ আলীম
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, বাংলাদেশ নবীন লেখক ফোরাম
বর্তমানে করোনার কারণে সারা পৃথিবী কঠিন সময়ের মধ্যে অতিক্রম করছে। যার অংশ হিসেবে আমাদের লাল সবুজের এই সোনার দেশও দুঃসময় কাটাচ্ছে। কারণ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শে সর্বসাধারণের প্রতি লক্ষ্য রেখে দেশে বারবার লকডাউন, শাটডাউন দেয়া হচ্ছে। সবকিছু বন্ধ থাকায় দেশের অর্থনীতির চাকাও দুর্বল হয়ে পড়েছে। আর এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের তৈরি করা ভ্যাকসিন নিতে বলা হচ্ছে।
অতএব, আমি এই ভ্যাকসিনের বিষয়ে মনে করি যে, স্বাভাবিক দৃষ্টিতেই এই ভ্যাকসিন নেয়া উচিত। কারণ, সতর্ক অবলম্বন করা ভালো। আর এমনিতেই দেশের পরিস্থিতি অন্য রকম, যেহেতু সরকার এই ভ্যাকসিন নেয়ার কথা বলেছেন, সে ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন দেয়াটাই জরুরি।
ভ্যাকসিন নেয়া যেতে পারে
হুসাইন আহমদ
শিক্ষার্থী, ইসলামি আইন ও গবেষণা বিভাগ, দারুস-সুন্নাহ মাদরাসা, টাংগাইল
আমি বর্তমান সুস্থ সবল একজন মানুষ। আমার শরীরে কোন প্রকারের রোগ নেই। কোন ধরনের সমস্যাও অনুভব করছি না। তাহলে আমি ভ্যাকসিন কেন নিবো? এ প্রশ্নটা আমাদের অনেকের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। এমন কি আমার মধ্যেও এ প্রশ্নটা ঘুরপাক খেয়েছে। আমি অনেকের কাছে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাও করেছি। সবকিছু জেনে এখন আমি মনে করি, আমাদেরকে করোনার ভ্যাকসিন নেয়া উচিত। কারণ করোনাভাইরাস একজন সুস্থ সবল মানুষকেও আক্রান্ত করতে পারে। বয়সে তরুণ, সুস্থ সবল, শক্তিশালী দেহ এমন অনেক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এছাড়া পরিবারের কেউ আক্রান্ত হলে সেটা পরিবারের সবার জন্য দুশ্চিন্তার কারণও হতে পারে।
এজন্য আমি মনে করি, স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য, বিশেষজ্ঞদের মতের জন্য ও ভবিষ্যতের নানা সমস্যার সম্মুখীন হওয়া থেকে নিরাপদ থাকার জন্য হলেও ভ্যাকসিন নেয়া যেতে পারে। তাই সুযোগ হলে আমরা সবাই ভ্যাকসিন গ্রহণ করবো, ইনশাআল্লাহ।
ভ্যাকসিন উপকারী বিবেচনায়ও নেয়া উচিত
নাজমুল হাসান সাকিব
শিক্ষার্থী, ইসলামি রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, বাংলাদেশ
বর্তমানে আমরা একটি নাজুক অবস্থার মধ্যে আছি। একথা কারো অজানা নয়। তা হলো, করোনা ভাইরাস। এই করোনা ভাইরাসের কারণে পৃথিবী থমকে দাঁড়িয়েছে। এর থেকে নিরাপদ থাকার জন্য বিশেষজ্ঞরা ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছেন। এই করোনার ভ্যাকসিন নেয়ার ব্যপারে অনেকের ভিন্ন ভিন্ন মতামত থাকতে পারে।
কিন্তু এই ভ্যাকসিনের বিষয়ে আমার দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক। নেয়া যেতে পারে। সবার-ই এই ভ্যাকসিন গ্রহণ করা প্রয়োজন। যতটুকু জেনেছি, এটাতে কোন রকমের সমস্যা নেই। অতএব, শরয়ী কোন বাধা না থাকলে আমাদের সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে উপকারী বিষয় বিবেচনায়ও অব্যশই নেয়া উচিত।
ভ্যাকসিন নেয়াতে সমস্যা নেই
তরিকুল ইসলাম মুক্তার
শিক্ষার্থী, জামিয়া শায়খ আব্দুল মোমিন, ময়মনসিংহ
কোনো রোগ বা মহামারির জন্য উক্ত এলাকার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা অনুচিত কিছু নয়। কারণ, হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন এলাকায় মহামারি আক্রান্ত হলে আক্রান্ত এলাকার কেউ যেন বাইরে না আসে আর বাহির থেকে কেউ এলাকায় প্রবেশ না করে। সুতরাং বুঝা গেল আমাদের দেশে লকডাউন বা শাটডাউন তা কুরআন হাদিসের বাইরে নয়। বরং তা কুরআন হাদিস থেকেই বের করা হয়েছে।
অপর এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জামানায় কোন এলাকা রোগে আক্রান্ত হলে ওষুধ সেবন করার জন্য বলতেন এবং প্রত্যেককে সুচিকিৎসা নেয়ার জন্য তাকিদ দিতেন। তাহলে এর দ্বারাও বুঝা যায় ভ্যাকসিন নেয়াতে কোন সমস্যা নেই। তাই আমি মনে করি, রোগ থেকে নিজে বাঁচার জন্য এবং অপর ভাইকে বাঁচানোর জন্য ভ্যাকসিন নেয়া জরুরি।
করোনার ভ্যাকসিন নিতে দ্বিধাদ্বন্দ্ব নয়
মাহফুজুর রহমান
শিক্ষার্থী, দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসা, চট্টগ্রাম
বর্তমান সময়ে করোনার ভ্যাকসিন নেয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কারণ, তার কার্যকারিতা পাওয়া যাচ্ছে। কেউ কেউ বলেন ৭০% কার্যকারিতা রয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন ৫০% কার্যকারিতা রয়েছে। যাই হোক, উপকার থেকে তো খালি নেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, তার কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। আর বিষয়টা জরুরিও হয়ে গেছে। হ্যাঁ, ভ্যাকসিন নেয়ার ক্ষেত্রে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, নির্ভরযোগ্য কোন স্থান হতে ভ্যাকসিন গ্রহণ করা। যাতে করে প্রথম ডোজ নেয়ার পরে দ্বিতীয় ডোজও সহজে গ্রহণ করা যায়।
তাই আমি বলবো যে, করোনার ভ্যাকসিন নিতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ার কোন কারণ নেই। এতে উল্লেখযোগ্য উলামায়ে কেরামও একমত পোষণ করেছেন। তাই সবকিছু বিবেচনা করে আমরাও চাইলে ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে পারি।
Leave a Reply