শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:৫৭ পূর্বাহ্ন

বিপদে বিবৃতি : শিষ্টাচারের রাজনীতি

বিপদে বিবৃতি : শিষ্টাচারের রাজনীতি

বিপদে বিবৃতি : শিষ্টাচারের রাজনীতি

নোমান বিন আরমান

বরিশালে মাওলানা ফয়জুল করীম হামলায় আহত হয়ে সবার সহমর্মিতা ও ভালোবাসা পাচ্ছেন। দলটির রাজনৈতিক ও মাসলাকি আদর্শের সঙ্গে বৈপরিত্ব আছে এমন দল, সংগঠন, সংস্থা ও খানকা থেকেও তাঁর প্রতি সহানুভুতি, সহমর্মিতা জানানো হচ্ছে!

মুখ দেখাদেখি ও কথা বলা বন্ধের দেশীয় রাজনীতিতে এ এক নতুন মাইলফলক। এক নতুন সংস্কৃতির সূচনা। শোভন ও ভালো কিছু দেশের জন্য কল্যাণই বয়ে আনে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে ইসলামি আন্দোলন কিভাবে মূল্যায়ন করে, তার ওপরই তাদের আগামী দিনের রাজনীতির গতিপথ নির্ভর করবে।

মাওলানা ফয়জুল করীমের প্রতি এই সহমর্মিতা অপ্রত্যাশিত না হলেও রীতিমতো অস্বাভাবিক। মাওলানা হামলার শিকার হয়েছেন সত্য, তবে রড় ধরণের আহত হননি। কিন্তু এরচেয়েও বেশি হতা-হতের ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঘটেছে। কেউ কাউকে এতটুকু মৌখিক সহমর্মিতা জানায়নি। বিবৃতি তো অনেক পরের ব্যাপার। কিন্তু তাঁর ওপর হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শীর্ষ রাজনৈতিক দলগুলো অফিসিয়াল বিবৃতি পাঠিয়েছে, ইতোমধ্যে (অন্তত) দুটো দল সরাসরি সাক্ষাৎ করে তাঁর কুশল জেনেছে। এই দৃশ্য এদেশের রাজনীতিতে খুবই বিরল।

চারদলীয় জোট গঠনকে কেন্দ্র করেই মাঠের রাজনীতিতে ‘একলা’ চলছে ইসলামি আন্দোলন। এরশাদের সঙ্গে ২০০১ এর নির্বাচনের আগে কিছুদিনের একটা জোট অবশ্য তাদের হয়েছিলো। সেটা বেশিদূর এগোয়নি। এরপর থেকে কারও সঙ্গেই তাদের প্রকাশ্য জোট নেই।

প্রায় দুই যুগ ধরে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে স্বাভাবিক রাজনৈতিক মৈত্রী ও সম্পর্কের বদলে সেটাকে নানা বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডে নিজেরাও খারাপ করেছে। গত দশ বছরে সমমনাদের বন্ধু-ভাই ভাবা দূর, গোনায় নিতে চায়নি তারা। একটা অহম ও ঔদ্ধ্যত্ব দেখা গেছে তাদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বে। এমনিক খোদ মাওলানা ফয়জুল করীমের বক্তব্য, আচরণেও সেটা বারবার প্রকাশ পেয়েছে। খুব বাজেভাবে।

ইসলামি আন্দোলন এতো বছর যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, বিরোধী দলগুলোকে কুণ্ঠাসা করে রাখার সময়ে তারা যেভাবে দাপিয়ে বেড়িয়েছে, এতে স্বাভাবিকভাবেই তাদের প্রতি অন্যদের ক্ষোভ, অভিমান থাকার কথা। তাদের বিপদে সহমর্মিতা জানিয়ে বিরোধীদের কারোরই বিবৃতি দেয়ার কথাই না। কিন্তু সেটাই এবার ঘটেছে। এটা তাদের জন্য একটা বাড়তি পাওয়া। নির্বাচনে পরাজয়, হারার চেয়ে এটা অনেক বড়। মাওলানার কান্না করার কিছু নাই।

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যে ঔদার্যের পরিচয় দিয়েছে, শোভন ও শিষ্টাচারের রাজনীতির সংস্কৃতি দেখিয়েছে, এটাকে সম্মান করতে না পারলে, নিজেদের অতীত ভুল ও ঔদ্ধত্য থেকে শিক্ষা না নিলে আগামি দিনে ইসলামি আন্দোলনকে একাই এর মাশুল দিতে হবে।

শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved 2018 shilonbangla.com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com