বিবাহ একটি বৈধ ও সুন্দর সম্পর্কের নাম। কিন্তু এই বিয়ে যদি হয় প্রতারণার হাতিয়ার তা অবশ্যই দোষণীয়। বিদেশে নেয়ার নাম করে প্রতারণা করে পতিতাপল্লিতেও নামিয়ে দিয়ে আসেন প্রেমিক পুরুষ। রাজধানীতে এমন অনেক বিয়ের গল্প সম্পর্কে জানা যায়। ১৫ আগস্ট সোমবার ঢাকার উত্তরায় একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার পর মৃত রুবেলের মরদেহ নিতে হাজির হয় পাঁচজনের বেশি স্ত্রী ও স্বজন। কেবল শরয়ী আদেশ লঙ্ঘন করেছেন তা-ই নয়। তিনি দেশের আইনও লঙ্ঘন করেছেন। আশ্রয় নিয়েছেন প্রতারণার। ইসলামী ফিকহে বিশেষজ্ঞ দুই জন ইসলামিক স্কলারের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন মানযার হাসিন
মাওলানা ইউসুফ নূর, ইমাম, খতীব ও মুফাসসির, কাতার ধর্মমন্ত্রণালয়
বহুবিবাহ করে গার্ডার দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তি সামাজিক অবক্ষয় ও শরয়ী আদেশ লঙ্ঘনের চরম অবমাননাকর নজীর স্থাপন করে গেলেন। কেবল নামে মুসলমান হওয়ায় কোনো গৌরব নেই। আল্লাহর আদেশ ও নবীজীর হুকুম আহকাম তথা বিধিবিধান অনুযায়ী চলাই একজন মোমিনের কাজ। দ্বীনী দাওয়াতে যারা কাজ করছেন, তাদের জন্য এটা বড় ম্যাসেজ। আমাদের এ সমাজ কত নীচের দিকে ধাবমান- এ ঘটনা তারই সাক্ষী। আল্লাহ আমাদের দ্বীনী দাওয়াতমূলক কাজ আরও বাড়িয়ে দেয়ার তাওফিক দিন। নৈতিক অবক্ষয় ও বিবাহবহির্ভূত যৌনচার প্রত্যেক ধর্মেই নিন্দনীয়। সামাজিক বিচারেও ঘৃণিত। সুরুচীর পরিপন্থী। নৈতিক মূল্যবোধ ঠেকাতে প্রয়োজনে মুসলিম ও অমুসলিম চিন্তাবিদ-স্কলার ও সমাজিক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে নৈতিক মূল্যবোধের একটি প্লাটফর্ম আহ্বান করা যেতে পারে। যারা নৈতিক মূল্যবোধের প্রচার ও প্রসারে কাজ করবেন।
মুফতী আবুবকর সাদি, প্রিন্সিপাল, মারকাযুল মাআরিফ আল ইসলামিয়া, উত্তরবাড্ডা, ঢাকা
চলতি সপ্তাহের শুরুতে ঘটে যাওয়া এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা। বিআরটি প্রকল্পের আওতায় রাস্তা তৈরির জন্য বিরাট আকৃতির কংক্রিট ‘গার্ডার’ ঝুলন্ত ক্রেন থেকে ছিটকে পড়ে একটি প্রাইভেট কারের উপর। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় পাঁচ যাত্রী। যাদের মধ্যে শিশুও ছিল। যার ভয়াবহতায় শংকিত, স্তব্ধ দেশের প্রতিটি মানুষ। যা নাড়া দিয়েছে বিবেকবান প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে। কিন্তু এ দুর্ঘটনার ভেতর দিয়ে প্রকাশিত সংবাদে ভিন্ন একটি বিষয়ও উঠে এসেছে। যা সমাজের অবক্ষয়, সময়ের অস্থিরতা ও বিকৃত বিবেকের চিত্রকে আমাদের সামনে একেবারে স্পষ্ট করে দিয়েছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশ, দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো রুবেল নামের এক যাত্রী। এখন পর্যন্ত আটজন মহিলা নিজেদেরকে তার স্ত্রী বলে দাবি করেছে। প্রত্যেকেই নিজ নিজ দাবির পক্ষে নিজেদের মতো করে প্রমাণাদি পেশ করছে। ঘটনার আকস্মিকতায় মানুষ স্তম্ভিত, নির্বাক।
বিষয়টি যেমনভাবে দুঃখজনক ও লজ্জার। তেমনি এর মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে সময়ের বাস্তব চিত্র।
ইসলাম মানুষকে যে পরিমিতবোধ ও পবিত্রতা শিক্ষা দেয় এটা সম্পূর্ণ তাঁর বিপরীত। পবিত্র কুরআনে সূরা মুমিনুনের ৫ নং আয়াতে সফল মানুষের যে বৈশিষ্ট্য বলা হয়েছে, তা মানব জীবনের শান্তির একমাত্র চাবিকাঠি।
আর বহুগামিতার এ বল্গাহীন জীবনকে ইসলাম তো দূরে থাক, আমাদের জানা মতে, কোন সভ্য ধর্মই সমর্থন করবে না। আল কোরআনের শ্বাশত বিধান, সূরা নিসার ৩ নং আয়াতে চার বিবাহের যে বিধান দেয়া হয়েছে এটি পরিমিত ও বাহুল্য বর্জিত। যা মানুষের স্বভাব স্পর্শী, ব্যবহারিক। এর সীমাতিক্রম হারাম ও অবৈধ। আর যদি তা হয় পরকিয়ার পন্থায়, তাহলে তো এটি আরো জঘণ্য। কেননা ইসলামে বিবাহের ঘোষণার বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সাথে সাথে এ ঘটনায় প্রকাশ পায় নারীর প্রতি অবজ্ঞা ও অবহেলা। ইসলাম এ ব্যপারে বরাবরই সোচ্চার। কিন্তু সত্যি কথা হলো এটাই আজকের সমাজের বাস্তব চিত্র। যা সভ্য প্রতিটি প্রাণীকে শংকিত করে। এর কুফল থেকে সমাজের কেউই মুক্ত নয়। অনিরাপত্তা, অস্থিরতা, অশান্তি, স্রষ্টার ক্রোধ ক্রমেই আমাদের উপর ঘুরছে। যে প্রতিটি অকল্যাণের কথাই কুরআন-সুন্নায় একাধিকবার বিবৃত হয়েছে।
এ কুফল থেকে বাঁচতে ধর্মের মৌলিক চর্চার বিকল্প নেই।
Leave a Reply