শনিবার, ২৭ মে ২০২৩, ০২:৫৭ অপরাহ্ন

নারীকে রাণীর আসনে বসিয়েছে ইসলাম

নারীকে রাণীর আসনে বসিয়েছে ইসলাম

নারীকে রাণীর আসনে বসিয়েছে ইসলাম

সাইফুর রহমান ফাহিম

ইসলাম আগমনের পূর্বে নারীদের অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। কোথাও নারীদের কোন মর্যাদা ছিল না। পুরুষের চোখে নারী ছিল জৈবিক চাহিদা পূরণের ‘খেলনা’ মাত্র।ইতিহাসের পাঠ আমাদের জানায়,নারীরা হাঁড় ভাঙা পরিশ্রমের মাধ্যমে উপার্জন করে তা পুরুষদের দিতে হতো। তবুও পুরুষের কাছে নারী ছিল গবাদি পশুর মতো। গবাদি পশুকে যেমন হাট-বাজারে বিক্রি করা হয় তেমনি নারীদেরকেও বিক্রি করে চলতো রমরমা ব্যবসা। সামান্য কারণে-অকারণে নারীদের নাক-কানসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গ কেটে দেওয়া হতো। কোন কোন সময় কোন কারণ ছাড়াই হত্যার মতো নিষ্ঠুর কাজ করতেও দ্বিধা বোধ করতো না পুরুষজাতি।গোত্রপতির শাসন বিদ্যমান ছিল। তাদের নির্দেশ ছিল তারা যেন পারিবারিকভাবেও কোন সম্পত্তি না পায়।এবং নারীর পরিচয় হবে একটাই, “ব্যবসায়ী পণ্য”।

আরবের অনেক সম্প্রদায়ের এরূপ নিপীঢ়ন মূলক প্রথা ছিল যে, বিধবা হওয়ার পর নারীদের ঘর থেকে বের করে একটি আঁটসাটোঁ ঝুপড়িতে বন্দী করে রাখা হতো। সেখানে তারা না পারতো বের হতে, না পেতে ভালো খাবার।

অনেক সময় খাবার না দিয়ে ধুকে-ধুকে মারা মারা হতো। আর যাদেরকে এরকম ঘরে দেওয়া হতো না, তাদের মাথায় উটের নাড়ী-ভুড়ি দিয়ে সমস্ত গোত্রে-এলাকায় ঘুরানো হতো। দূঃখী নারীরা নিজের অসহায়ত্বতায় বিড়বিড় করতো, অশ্রু বিসর্জন দিতো, কিন্তুএতে তাদের কারো মন বিগলিত হতো না। সমাজে এটা ছিল নিত্য নৈমিত্তিক স্বাভাবিক কাজ। এর মাধ্যমে সবাই পৈশাচিক আনন্দ পেত।

এই রকম নিষ্ঠুর পরিস্থিতির স্বীকার শুধু একমাত্র যুবতি নারীরা হতো?

উত্তর হলো, না। বরং নিস্পাপ কন্যা শিশুদেরকে তপ্ত গরম মরুভূমির বালু ও পাথর চাপা দিয়ে জীবন্ত দাফন করা হতো। কন্যা সন্তান হলে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারতো না সন্তানের বাবা। এটাকে একপ্রকার মহা অভিশাপ, কলঙ্ক ও লাঞ্চনা মনে করতো সমাজের মানুষ। এক কথায় বলতে গেলে এসমস্ত অত্যাচার, নিষ্ঠুর অমানবিক আচরণ ছিল নারীদের জন্য পশুর ন্যায়। পশুকে এবং নারীকে একই দৃষ্টিতে দেখা হতো বললে ভুল হবে না।

এমন জাহিলিয়াতের সময় আরবের মধ্যে ইসলামের বাণী নিয়ে আগমন করলেন বিশ্ব মানবতার দূত হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। তিনি সর্বপ্রথম নারীদেরকে দাসী থেকে রাণীর আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। ইসলামের আগমনের পরে নারীদের প্রতি চালিত নিপীড়নের সব দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। ন্যায়-ইনসাফের ভিত্তিতে নারীদের অধিকার নিশ্চিত করেছেন। আগমনের পূর্বে যেমন ধাপে ধাপে কন্যা হিসাবে, স্ত্রী হিসাবে অত্যাচার করেছে তেমনিভাবে ইসলাম আগমনের পরে নারীরা কখনো কন্যা হিসাবে, বোন হিসাবে, স্ত্রী হিসাবে, মাতা হিসাবে পেয়েছে যথাক্রমে স্নেহ, ভালোবাসা, অধিকার ও সম্মান। যেমন মেয়েদের ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) বলেন, মেয়ে শিশু বরকত (প্রাচুর্য) ও কল্যানের প্রতীক।
(আল-হাদিস)

বোন হিসাবে অগ্রাধিকার ও ভালোবাসা দিতে গিয়ে বলেন,কারও যদি কন্যা সন্তান ও পুত্রসন্তান থাকে আর তিনি যদি সন্তানের জন্য কোন কিছু নিয়ে আসেন, তবে প্রথমে তা মেয়ের হাতে দিবে, মেয়ে বেছে নিয়ে তারপর তার ভাইকে দিবে। (আল-হাদিস)

স্ত্রীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় মহাগ্রন্থ আল কুরআনে বলা হয়েছে, নারীদের উপর যেমন অধিকার রয়েছে পুরুষের, তেমনি রয়েছে পুরুষের ওপর নারীর অধিকার (সুরা-বাকারা-২২৮)
পূর্বে বিধবা নারীদের জ্বলন্ত আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হতো।অন্যদিকে ইসলাম বিধনা নারীর প্রতি ঘোষণা দিয়ে বলে, যারা বিধবা নারীর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেয়, তারা যেন আল্লাহর পথে জিহাদকারী ও নিরলস নামাজি ও সদা রোজা পালনকারী (বুখারী ও মুসলিম)

মা হিসাবে মর্যাদা দিয়ে বলা হয়েছে, মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেস্ত। এছাড়াও মাকে তিনবার পর্যন্ত সম্মান করা হয়েছে।

হযরত আবু বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একবার একলোক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশি অধিকারী কে?
নবীজি বললেন তোমার মা। ওই লোক আবার প্রশ্ন করলেন তারপর কে? তিনি উত্তর দিলেন তোমার মা।ওই লোক আবার জিজ্ঞেস করলেন এরপর কে? তিনি আবার উত্তর দিলেন তোমার মা। (সহীহ বুখারী)
এ ছাড়াও পবিত্র কুরআনে অসংখ্য নারীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলাম নারীর অধিকার আদায়ের প্রত্যয়ে সমস্ত বাধা-বিপত্তি, চরাই-উৎরাই, ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট, প্রতিবন্ধকতা ও অপ্রতিরোধ্য সকল প্রথাকে মরুধূলির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। গোত্র প্রথা, সামাজিক প্রথা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ,লড়াই-সংগ্রাম, এবং দৃঢ়তা দিয়েই ইসলাম এগিয়ে নিয়েছে নারীকূলকে।

পরম সত্য কথা হলো, ইসলাম নারীর অধিকার আদায়ে, সম্মান-ইজ্জত ও সম্ভ্রম রক্ষায় সদাসর্বদা ছিল অকুন্ঠ। তথা নিন্দিত আরবের সভ্যতা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, শোষণ, অত্যাচার জাতিগত দাঙ্গাকে রুখে দিয়েছে। আর নারীজাতিকে দিয়েছে আশ্রয়, অধিকার, সম্মান, মর্যাদা ও স্বাধীনতা।
তাই বলতে হয়, ইসলাম নারীকে দিয়েছে প্রথম মুক্তি নরসম অধিকার/ মানুষের গড়া প্রাচীর ভাঙ্গিয়া করেছে একাকার।
আর ইসলাম দেখিয়েছে, নর-নারী একে অপরের পরিপূরক, প্রতিদ্বন্দ্বী নয় বরং সহোযোগী।
তাই জাতিয় কবি কাজী নজরুল লিখেছেন,
বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি কল্যানকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।
আর এটাই বাস্তব ও চিরসত্য।
লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
rsaifur637@gmail.com

শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved 2018 shilonbangla.com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com