ধর্ষণ প্রতিরোধে নাগরিকদের সচেতনতা কাম্য
ফজলে রাব্বি
ধর্ষণ জঘন্যতম অপরাধের মধ্যে একটি। এতে সমাজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। সৃষ্টি করে মানুষের মাঝে ঘৃণা-বিভেদ। একজন সুস্থ এবং মনুষ্যত্ববোধ সম্পন্ন মানুষের দ্বারা এটি কখনোই সম্ভব নয় বরং তাদের বিবেক বাঁধা দিবে। মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত লোকেরাই এ ধরনের অপরাধগুলো একের পর এক ঘটিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে দেশে ধর্ষিত নারী-শিশুর হার উতরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধর্ষণের শিকার হওয়া একজন নারী বা শিশুকে সারাজীবন এর ক্ষত বয়ে বেড়াতে হয়। সমাজে চলাফেরায় সমস্যা, অনেকে মানসিক ট্রমায় আক্রান্ত, অবিবাহিত থাকলে বিবাহ নিয়ে ঝামেলা এবং এমনকি আত্মহত্যার ঘটনা পর্যন্ত ঘটে। আমাদের দেশে করোনা মহামারির মতো ধর্ষণ ও একটি মহামারির ন্যায় আকার ধারণ করেছে। ধর্ষণ প্রতিরোধে সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং সামাজিকভাবে আন্দোলন গড়ে তোলা জরুরি। তা না হলে এ মহামারি থেকে সহজেই রেহাই পাওয়া যাবে না। গত বুধবার ঢাকা থেকে পর্যটন শহর কক্সবাজার ঘুরতে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক গৃহবধূ।
স্বামী-সন্তানকে আটকে রেখে হত্যার ভয় দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করে তিন যুবক। আবার, সিলেটের এমসি কলেজে স্বামীর সাথে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন এক নারী। চলন্ত বাসে ধর্ষণের ঘটনা পত্রিকার পাতা উল্টালেই দেখা যায়। মনে হচ্ছে একমাত্র মায়ের কোল ছাড়া নারী-শিশুরা আজ কোথা ও নিরাপদ নয়! বিষয়টি বেদনাদায়ক এবং মর্মস্পর্শী। তাদের নিরাপত্তা এবং সুষ্ঠু জীবন বিকাশে রাষ্ট্র জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করবে সে প্রত্যাশা সকল নাগরিকের। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার ১ হাজার ৪১৩ জন নারী ও শিশু। শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম এর তথ্যমতে, প্রতি মাসে গড়ে ৮৪ টি শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। করোনা মহামারিকালে সেটি আরো দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে ও ধর্ষণ-ব্যভিচারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনের সুরা আল ইসরা (আয়াতঃ ৩২) স্পষ্টত উল্লেখ আছে, “আর ব্যভিচারের কাছে ও যেয়ো না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।” ধর্ষণের ক্ষেত্রে ছদ্মবেশী অপরাধীরা ও অনেকাংশে দায়ী। হুমায়ূন আহমেদের প্রথম উপন্যাস নন্দিত নরকে সে বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। উপন্যাসের চরিত্র মাস্টার কাকা খোকাদের বাড়িতেই বসবাস করতেন। খোকার বোন মানসিক সমস্যাগ্রস্ত রাবেয়াকে তিনি একদিন সুযোগে ধর্ষণ করেন। ফলশ্রুতিতে খোকাদের সাজানো সংসারটা নিমিষেই এলোমেলো হয়ে যায়।
এরকম হাজারো মাস্টার কাকা আমাদের সমাজে ঘাপটি মেরে বসে আছে। ধর্ষণ প্রতিরোধে তাদের ব্যাপারে ও সচেতন থাকতে হবে। পেনাল কোডের ৩৭৬ ধারায় ধর্ষণের শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা দশ বছর মেয়াদে কারাদণ্ড থাকলে ও বর্তমানে সে আইন সংশোধন করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। সমাজবিজ্ঞানের ভাষায়, কোন অপরাধের শাস্তি হিসেবে যদি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয় তাহলে শাস্তির ভয়ে সমাজের সদস্যরা এ ধরনের অপরাধ ঘটাতে নিরুৎসাহিত হবে এবং সমাজে অপরাধের মাত্রা কমে যাবে। যেহেতু ধর্ষণের অপরাধের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে সেহেতু ধর্ষণে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচারকার্য সম্পন্ন করে উপর্যুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। পাশাপাশি রাষ্ট্রকে ধর্ষণ প্রতিরোধে বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন এবং এর পরিণতি সম্পর্কে নাগরিকদের অবগত করতে হবে।
নাগরিকদের ধর্মীয় জ্ঞানে উদ্বুদ্ধ করতে হবে এবং তাদের মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। পরিবার বা সমাজের অভিভাবকদের ও সচেতন হতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ধর্ষণ মহামারি প্রতিরোধ সম্ভব। তাই আসুন রাষ্ট্রের সবাই মিলে করোনার মতো ধর্ষণ মহামারি ও প্রতিরোধ করি।
লেখক : শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা কলেজ, ঢাকা
Leave a Reply