আজ পাঁচ মাস হতে চললো আমাদের বাবা আলহাজ আমির হোসাইন রহ. দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন) গ্রামপর্যায়ে চলছে নির্বাচনী হৈহুল্লুড়। ২০০৩ সালে নির্বাচন নিয়ে আমার তেমন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু অবাক হয়ে দেখেছি আমাদের গ্রামের মানুষজন কীভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। আজ আঠার বছরের মাথায় সেই সব মনে পড়লে বাস্তবেই গর্ববোধ হয়। আমি এই বাবার ঘরেই জন্মেছিলাম। সামান্য গ্রামের একটি ঝুপড়িতে জন্মেছিলাম সত্য। কিন্তু আমার বাবার আশা ছিল বিশ্বজয়ীর মতোই। কখনো ছোটখাট আশা তিনি করতেন না। পয়সা অর্জন করে বাবাকে রাঙিয়ে এমন আশা-ও ছিল না। তিনি চাইতেন, প্রায়শ অন্যের জন্য। মানুষকে সবসময় ভালোবেসে গেছেন। এলাকার মসজিদ, মাদরাসা, হাট-বাজারসহ নানা জায়গায় তার অবদান আছে। সমাজসেবায় আমাদের কাজের প্রতি আগ্রহ-এটাও বাবার কাছ থেকেই বড় শিক্ষা বলা যায়।
আমি একদিন বাবাকে বল্লাম, এই বৃদ্ধবয়সে রাতবিরাতে কেন আপনি গ্রামের অলিগলিতে ছুটে বেড়ান। আর এত এত বিচারই কেন রাতে করতে হবে?
বাবা হাসতেন। বলতেন, ঘুষ খাই না। নীতির উপর থাকার চেষ্টা করি। চতুর্দিকে অমানুষ। একজন সাধারণ মানুষকে হারিয়ে দিতে অমানুষেরা প্রতিদিনই, প্রতি রাতই একত্র হয়। এদের মুখোস উন্মোচন করতে, সত্যের বিজয়ের জন্যই আমাকে লড়াই করতে হয়। মানুষের সামাজিক শান্তিটা বড় প্রয়োজন। নিরীহ মানুষের হয়ে কেউ কাজ করে না।
আমি চুপ হয়ে গেলাম। আর কথাই বলতে পারলাম না। আমি জানি, বাবার কষ্ট হয়। শত কষ্টকে পেছনে ঠেলে রাতবিরাতে তিনি সামাজিক বিচার আচার করতেন। মানুষ চাইতো, বাবা যেন বিচারে থাকেন।
আর অল্প কয়েকদিন আছে আমাদের জগদিশপুর ইউপির নির্বাচন। দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার পঞ্চাশেও আমাদের খড়কী গ্রাম কখনো চেয়ারম্যানের মুখ দেখেনি। ২০০৩ সালেও সম্ভব হয়নি। অথচ যে মানুষগুলো, যে বাড়িটা বাবার নির্বাচনের আগের দিন বিক্রি হয়ে গিয়েছিল, সে-ই তারাই আগে এবং পরে এ গ্রামেই চেয়ারম্যান আসুক এমনটা চেয়েছেন। এবারও সুযোগ আছে। আমাদের ভাই জনবা হুমায়ুন কবির খড়কী গ্রামের সেই কাঙ্ক্ষিত চেয়ারম্যানখড়া মেটাতে মাঠে তৎপর। আমাদের পারিবারিক সিদ্ধান্ত-সবসময় গ্রামের মানুষের সঙ্গেই আমরা আছি। অতীতে বাবাও ছিলেন। এ জন্য অনেক ত্যাগও দিতে হয়েছে। বিনিময়ে বাবা গ্রামের মানুষদের অবারিত ভালোবাসা পেয়েছেন। আমৃত্যু তিনি গ্রামের সবচেয়ে বড় মসজিদের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।
নির্বাচনের আগে পরে গ্রামের মানুষ এমন ভালোবাসা দেখিয়েছেন-এর নজীর বিরল। সবসময় গ্রামের মানুষদের কল্যাণ চাই। দুই পয়সার উপকার হলেও আমরা করে যেতে চাই। আসুন, আমরা গ্রামের স্বার্থে, উন্নয়নের স্বার্থে, হৃদয়ের টানে গ্রামের মানুষের পক্ষে থাকি। আল্লাহ আমাদের আমানত-ভোটাধিকার সঠিক জায়গায় প্রয়োগের তাওফিক দিন। টাকা খেয়ে ভালো লোককে ভোট দিলেও পাপ। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন।
Leave a Reply