কওমি মাদরাসা স্বীকৃতির পাঁচ বছর হয়ে গেল। এখনো অধরাই থাকলো কওমি মাদরাসা স্বীকৃতির বাস্তবিক সুফল। আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ নামের একটি অথরিটির মাধ্যমে ছয়টি বোর্ডের তত্ত্বাবধানে পরীক্ষা নেয়া হলেও কোনো নীতিমালার আওতায় এখনো আনা যায়নি। ইংরেজ আগমনের আগে শুধু বাংলাতেই ছিল ৮০ হাজার মাদরাসা-মক্তব। সে সময় পর্যন্ত মাদরাসার তাবৎ ব্যয়ভার বহন করত সরকার। তখন শিক্ষা বলতে ছিল কেবল মাদরাসা শিক্ষা। অন্য কোনো শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন ছিল না। অফিস-আদালতের ভাষা ছিল ফার্সি।
১৭৫৭ সালে পলাশীর ময়দানে বাংলার স্বাধীন সুলতান নওয়াব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মাধ্যমে অস্তমিত হয় উপমহাদেশের স্বাধীনতার সূর্য। এরপর হারায় কওমি মাদরাসা ঐতিহ্য। হযরত কাসেম নানুতাবি (রহ.)-এর হাত ধরে ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতে দারুল উলূম দেওবন্দ নামে এ শিক্ষাধারা নতুনভাবে শুরু হয়। স্বাধীনতার পরও ছিলো স্বীকৃতি। আশির দশকে আবারও স্বীকৃতি হারায় কওমি। তরুণদের লেখালেখি ও সচেতন আলেমদের আন্দোলনের ফলে স্বীকৃতির পক্ষে জনমত তৈরি হয়। এরপর খতিবে আজম আল্লামা সিদ্দিক আহমদ (রহ.), আল্লামা নূরউদ্দীন আহমদ গহরপুরী (রহ.), শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক (রহ.), মাওলানা ফজুলল করীম (রহ.), আল্লামা আহমদ শফী (রহ.), মাওলানা আবদুল বাসেত বরকতপুরী (রহ.), মুফতি মুহাম্মাদ ওয়াক্কাস (রহ.), আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রহ.), আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ, আল্লামা মুফতী আবদুল হালিম বোখারী, আল্লামা রুহুল আমীনসহ অনেক আলেম স্বীকৃতির আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন। তাদের ত্যাগ ও আন্তরিকতার কারণেই কওমি অঙ্গন পায় কাক্সিক্ষত স্বীকৃতি। পাঁচ বছরে স্বীকৃতি পেয়ে কী লাভ হলো, আরও কী করণীয় আছে- তা নিয়ে কথা বলেছেন শিক্ষক, কথাসাহিত্যিক, উদ্যোক্তা এবং গবেষক আলেমগণ।
নিচের কওমি স্বীকৃতির সুফল বিষয়ক পরামর্শ নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন মানজুম উমায়ের।
মুফতী শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতির একটি সফলতা। আল হাইআতুল উলইয়া লিল জামিআতিল কওমিয়্যাহ একটি মাইল ফলক। স্বীকৃতি ও উচ্চতর নির্বাহী পরিষদ (কর্তৃপক্ষ) প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছর পার হলেও এর উল্লেখযোগ্য কোনো অর্জন দৃশ্যমান নয়।
এখনো এই পর্ষদ তার মজবুত ভিত রচনা করে কুলিয়ে উঠতে পারেনি। এ পথ দীর্ঘ। এজন্য প্রয়োজন নিরলস প্রচেষ্টা, শক্তিশালী নেতৃত্ব ও ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস। কওমী মাদরাসা প্রতিষ্ঠার চার উদ্দেশ্য তথা- আকিদায়ে তাওহিদে খালিস (বিশুদ্ধ একত্ববাদে বিশ্বাস), ইত্তিবায়ে সুন্নাত (সুন্নাতের অনুসরণ), তাআল্লুক মাআল্লাহ (আল্লাহর সাথে সম্পর্ক), ইলায়ে কালিমাতুল্লা (আল্লাহর বাণী সর্বোচ্চে প্রতিষ্ঠা) এর আলোকে; উসূলে হাশতেগানা বা পরিচালনার অষ্ট মূলনীতির ভিত্তিতে মূল সিলেবাস ঠিক রেখে যুগচাহিদার নিরিখে প্রয়োজনীয় বিষয়াবলী সংযুক্ত করতে হবে।
মুফতী সাইফুল্লাহ
ইমাম, শহীদী জামে মসজিদ মালিবাগ, ঢাকা
কওমি সনদ প্রাপ্তির পাঁচ বছর পূর্তিতে সূচনাতে মহান রবের শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। যে সকল মুরুব্বিদের মেহনতে স্বীকৃতি পেয়েছি ওনাদের জন্য জাযাকাল্লাহু খাইরান। সাথে সরকারকেও জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। কওমি শিক্ষার মূল ভিত্তি হচ্ছে, ইলমে ওয়াহি। তাই এই শিক্ষা অর্জনের মূল লক্ষ্য হতে হবে আল্লাহর রাজি খুশি। সাথে সাথে দুনিয়াতে চলার জন্য সনদটাও সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে মাত্র। সেজন্য পরিপূর্ণ ইখলাস, স্বাতন্ত্র্যতা, লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও স্বকীয়তা রক্ষা করে আগাতে পারলে সনদ কল্যাণ বয়ে আনবে। তা না হলে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি।
আজকের দিনে আমার মূল্যায়ন হচ্ছে- সনদপ্রাপ্তিটা বড় একটা অর্জন বটে, কিন্তু আমাদের অসতর্কতার কারণে লাভের চেয়ে ক্ষতির পাল্লাই ভারি মনে হচ্ছে। আল্লাহ সকল ভুলগুলো ক্ষমা করে আমাদের জন্য ভালোর ফয়সালা করুন, আমিন।
ইমাম, শহীদী জামে মসজিদ মালিবাগ, ঢাকা
সাইমুম সাদী
পরিচালক, কওমি কারিগরি ইনস্টিটিউট
অনেক কিছুই পেয়েছি আবার অনেক কিছুই পাইনি। কওমি মাদরাসার ছাত্ররা এ সমাজেরই অংশÑএক সময় এই উপলব্ধি অনেকের ছিলো না। বিভিন্ন কলাকৌশলে তাদেরকে রাষ্ট্রের বিভিন্ন কার্যক্রম থেকে দূরে রাখার একটা প্রবণতা আমরা দেখতে পেতাম। এইক্ষেত্রে ইসলাম বিরোধী শক্তি যেমন তুচ্ছতাচ্ছিল্য করত তেমনি ইসলামী লাইনেরও কেউ কেউ বাজে আচরণ দেখাতেন। অথচ জ্ঞানে পাণ্ডিত্যে আচরণে আখলাকের ক্ষেত্রে কওমি জনশক্তির পথচলা কোন অংশেই কম ছিলো না।
দ্বিতীয়ত, উচ্চশিক্ষার জন্য এই স্বীকৃতি একটি মাইলফলক। দেশ ও দেশের বাইরে ভর্তির ক্ষেত্রে এটি কাজে লাগবে নিঃসন্দেহে।
কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্য দাওরা হাদিস উত্তীর্ণদের তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সুযোগ দিচ্ছে। তাছাড়া কওমি জনশক্তির মধ্যেও নতুনভাবে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করার আগ্রহ তৈরি হয়েছে। তবে সমস্যা হচ্ছে, এই স্বীকৃতি একটি নীতিগত স্বীকৃতি, পুরোপুরি কার্যকর কিছু না। একে কার্যকরী করতে হলে সরকারের আরও কয়েকটি অথরিটির সাপোর্ট প্রয়োজন। সেটা হয়নি এখনো।
উদাহরণস্বরূপ, হোমিওপ্যাথিতে ভর্তি হতে হলে এসএসসি পাশ হতে হয়। কিন্তু এখানে দাওরা পাশ করেও হোমিওপ্যাথিতে ভর্তির সুযোগ নেই। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে খোঁজ নিয়ে জানলাম একই অবস্থা। একে কার্যকর করতে হলে আরে কিছু কাজ বাকি রয়েছে। সেসব কমপ্লিট করতে পারলে কওমি অঙ্গনের জন্য এই স্বীকৃতি ফলপ্রসূ হবে ইনশাআল্লাহ।
পরিচালক, কওমি কারিগরি ইনস্টিটিউট
মুফতী আবূ বকর সাদি
প্রিন্সিপাল, মারকাযুল মাআরিফ আল ইসলামিয়া, ঢাকা
দীর্ঘদিনের চেষ্টা সাধনা, দৌড়-ঝাপের পর বাংলাদেশের কওমি মাদরাসাগুলোকে একটি শিরোনামের অধীনে আনা সম্ভব হয়। আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কাওমিয়্যা বাংলাদেশ। দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর স্বপ্ন সাধনা এর সাথে সম্পৃক্ত। শতাব্দীর পর শতাব্দী যারা এদেশের মানুষকে ভালবেসেছে। এ দেশের মাটির সোদা গন্ধে মিশে আছে যাদের স্নেহ-মমতা-মায়া! কাজেই এদের স্বপ্ন নির্মাণে যেকোন চেষ্টাই হবে মহত্তম উদ্যোগ, জাতীয় সৌভাগ্য। দু’হাজার আঠারোতে এসে একে মূল ধরে একটা সংসদীয় স্বীকৃতি বিল পাস হয়, যা কওমি মাদরাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিসের সনদকে (তাকমিল) মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান বিল ২০১৮ নামে প্রকাশিত হয়। কিন্তু বলতে গেলে এর কার্যকরি কোন আবেদন লক্ষ্য করা যায় না। সমন্বয়হীনতাকে আমরা যার অন্যতম কারণ বলে মনে করি। স্থবির ভাব কাটিয়ে উঠতে কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। না হয় এটা হবে রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার বিপুল অপচয়। সাধারণ দৃষ্টিতে এর জন্য এখনি যে কাজগুলো করা যায়।
এক. অপরাপর শিক্ষা ধারার সঙ্গে কার্যকরি সনদ বিনিময়।
দুই. মাধ্যমিক স্তরের ব্যাপারে আরো চিন্তা করা।
তিন. শক্তিশালি অডিট সিস্টেম। সমন্বিত ছয়বোর্ডে সর্ববৃহৎ বোর্ড ‘বেফাক’ যার সুফল ভোগ করছে। আর কওমি মাদরাসা সময়ের চাহিদা পূরণে সক্ষমতার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর। উপমহাদেশের অন্য দেশগুলো দেখলে আমরা এর উত্তর পেয়ে যাব। অবশ্য সিলেবাস পরিমার্জন হতে পারে। তবে তা সদিচ্ছার ভিত্তিতে, তাদের অনুমোদন সাপেক্ষে। এছাড়া অন্য কিছু চিন্তা করা হবে বৃহৎ ক্ষতির কারণ, যা বলার অপেক্ষা রাখে না।
প্রিন্সিপাল, মারকাযুল মাআরিফ আল ইসলামিয়া, ঢাকা
পার্ট টাইম ফ্যাকাল্টি, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি- আই ইউ টি, বোর্ড বাজার, গাজীপুর
প্রতিটি কাজেরই একটি ফলাফল থাকে। কার্যকর অথবা অকার্যকর। কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি গত পাঁচ বছরে কি ফলাফল বয়ে এনেছে? এই স্বীকৃতি দিয়ে আমরা কোন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে পেরেছি? মাস্টার্সের মান দিয়ে কোথাও চাকুরী পেয়েছি? বা বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে এর কোন গ্রহণযোগ্যতা আছে? জনমনে এ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন রয়েছে। আমরা যখন ‘শুধু করার জন্য’ কোন কাজ করি তখন সেটির কোন ফলাফল আসে না। কিন্তু সে কাজটি যদি কোন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার অংশ হয় তবে তার বাহ্যিক ফলাফল আপাতত দেখা না গেলেও সেটির দীর্ঘমেয়াদি একটি ফলাফল থাকতে পারে, যার জন্য অপেক্ষা করাই যায়। তবে কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের স্বীকৃতি যদি ‘শুধু করার জন্য করা’ হয়, তবে এর ফলাফল আশা করা বৃথা।
আর যদি তা কোন সুচিন্তিত ধারাবাহিক কর্মকাণ্ডের প্রথম ধাপ হয় তাহলে তো, আলহামদুলিল্লাহ! নিচের কোন ক্লাসকে মান না দিয়ে বা সেই প্রক্রিয়ায় না গিয়ে শুধু দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের স্বীকৃতি প্রদান এটি অনেকের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ। এটি বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকের হাস্যরসের কারণ ও যে হচ্ছে না, তা না। কারণ শিক্ষা হলো একটি স্তরভিত্তিক ব্যবস্থাপনা।
এখানে সবকিছু একটি স্তর বজায় রেখে চলে। কেউ উচ্চ-মাধ্যমিক আগে পাশ করতে পারে না। আগে তাকে মাধ্যমিক পাশ করে আসতে হয়। এ ক্ষেত্রে অতীতে এ ধরনের কোন স্বীকৃতি দেয়া হয়ে থাকলে সেটিকে উদাহরণ হিসেবে নেয়া যেতে পারে। আমার মতে, নিচ থেকে উপরের ক্লাসগুলোকে স্বীকৃতি দিতে হবে। এর জন্য যদি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার প্রয়োজন পড়ে তবে সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করা বাঞ্ছনীয়। দায়িত্বশীলদেরকে আরো প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়ে স্তরভিত্তিক একটি স্বীকৃতির পথে এগিয়ে যেতে হবে বলে আমি মনে করি।
স্বীকৃতির জন্য সিলেবাসে বিভিন্ন বিষয়ের অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে ‘উদার ও সচেতন’ থাকতে হবে। এ জন্য যত দ্রুত সম্ভব পরিকল্পিতভাবে স্তরভিত্তিক একটি স্বীকৃতির পথে এগিয়ে গেলে দেশ ও জাতির বড়ই উপকার হবে বলে আমার বিশ্বাস। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মুরুব্বীদের প্রজ্ঞাপূর্ণ, সতর্ক ও যুগ-সচেতন ভূমিকা কামনা করছি।
পার্ট টাইম ফ্যাকাল্টি, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি- আই ইউ টি, বোর্ড বাজার, গাজীপুর
রোকন রাইয়ান
ফাউন্ডার, কওমি উদ্যোক্তা
একথা সত্য, কওমি মাদরাসা স্বীকৃতির জন্য একটা সময় সার্বিক জনমত এক প্লাটফর্মে এসেছিল। কিন্তু প্রক্রিয়া বা এর প্রায়োগিক দিক নিয়ে নানারকম মত ছিল। দ্বিধায় ছিল একটা বড় অংশ। ফলে প্রত্যাশানুরূপ ফলাফল পাওয়া সম্ভব হয়নি।
একদল মনে করেন, স্বীকৃতি কেবল এ কথার সত্যায়ন করা যে, এটিও একটি শিক্ষাব্যবস্থা। একে অবহেলা নয়। আরেক দল মনে করেন, সার্বিকভাবে অগ্রসর জাতি হিসেবে আলেমদের এগিয়ে যাওয়া সময়ের দাবি। দেশ পরিচালনায় কিংবা অর্থনীতিতে অবদান রাখতে আলেমদের ভূমিকার ব্যাপকায়ন জরুরি। এখানে দুটি মত এখনো একত্র হতে পারে নি, কেননা আড়ালে কিছু পলিটিক্স রয়েছে। যে কারণে এ সার্বিক মতকে একত্রিত করতে সময় লেগে যাবে।
কওমি মাদরাসা কেবল শিক্ষা নয় একটি সামগ্রিক আদর্শ। এর লালন পালন প্রক্রিয়া সবই ভিন্ন। একে অতিমাত্রায় সাধারণীকরণ ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। এ জায়গায় কিছু উলামাকে স্ট্রেইট থাকতেই হচ্ছে। তবে সময়ের সঙ্গে হিসাব মেলাতে কিছু সংস্কার বা সংযোজন জরুরি। সিলেবাসকে ঢেলে সাজানো জরুরি। আলেমদের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি না হলে অযোগ্য নেতৃত্ব বা বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাবে। একে সামাল দেয়া কঠিন হবে একটা সময়। তাই স্বীকৃতিকে কাজে লাগিয়ে সুকৌশলী চিন্তায় এর সুফল আনা সময়ের দাবি।
ফাউন্ডার, কওমি উদ্যোক্তা
মাহমুদ মুজিব
শিক্ষক, জামেয়া দারুল মা’আরিফ আল-ইসলামিয়া, চট্টগ্রাম
এদেশের নেতৃস্থানীয় আলেম-ওলামা প্রায় স্বাধীনতার পর থেকেই কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতির ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করেছিলেন। আশির দশক থেকে বিভিন্ন সরকারের কাছে স্বীকৃতির ব্যাপারে যৌক্তিক দাবি-দাওয়াও তুলে আসছিলেন তাঁরা। বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বর্তমান সরকার কওমি সনদের স্বীকৃতি প্রদান করে। কওমি অঙ্গনের একজন হিসেবে মনে করি, সনদের স্বীকৃতির মাধ্যমে কওমি প্রজন্ম অন্ততপক্ষে সরকারি গেজেটেড শিক্ষিত সম্প্রদায় হিসেবে পরিগণিত হচ্ছেন এখন। তবে এই স্বীকৃতিকে আরো কার্যকর, প্রায়োগিক ও বাস্তবসম্মত করতে হলে, দেশে প্রচলিত অন্যান্য শিক্ষাধারার মতো করে স্টেপ বাই স্টেপ মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও অনার্সেরও স্বীকৃতির প্রয়োজন রয়েছে।
আজ হোক কাল হোক, একদিন অবশ্যই আমাদের কওমি অঙ্গন থেকেই এই দাবি উঠবে এবং এটাই স্বাভাবিক।
শিক্ষক, জামেয়া দারুল মা’আরিফ আল-ইসলামিয়া, চট্টগ্রাম
মাঈনুদ্দীন ওয়াদুদ
পরিচালক, মাদরাসাতুল মারওয়াহ, মিরপুর-১, ঢাকা-১২১৬
কওমি সনদের স্বীকৃতি আমাদের অধিকার, যা নাগরিক হিসেবে সবার প্রাপ্য। আরো আগেই প্রয়োজন ছিলো তার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির, সেটা আমরা দেরিতে হলেও আদায় করেছি, আলহামদুলিল্লাহ! তবে মাঠ পর্যায়ে তার বাস্তবায়ন সহজ বিষয় নয়, এজন্য ৫ বছর নয়, যদি ১৫ বছরও সময় লাগে, সেটা আমাদের দিতে হবে। আমাদের যা করণীয় তাহলো আমাদের শিক্ষার মানকে যথাযথ পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে এবং এজন্য যত কর্মপন্থা অবলম্বন করা দরকার, সেসব করতে হবে।
বিশেষত আমাদের জেনারেল যে সিলেবাস আছে, সেটাকে আরো মানসম্মত করতে হবে। প্রাইমারি পর্যায়ের প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সুবাদে যা উপলদ্ধি হয় তা হলো, আমাদের বোর্ডের জেনারেল সিলেবাস যুগ চাহিদার প্রেক্ষিতে আজঅব্দি গুণগত মানে নিয়ে আসা যায়নি নানাবিধ পারিপার্শ্বিকতার কারণে। সে বিষয়ে অভিভাবকরা বিভিন্ন সময় প্রশ্ন তুললেও আমরা নানা কারণে এড়িয়ে যাই। তবে বাস্তবতা অস্বীকার করার ফুরসত কই?
পরিচালক, মাদরাসাতুল মারওয়াহ, মিরপুর-১, ঢাকা-১২১৬
Leave a Reply