সামান্য একটা নির্বাচন থেকেও আপনি আবিষ্কার করতে পারেন-আসলে আপনার দেশপ্রেমবোধ আছে। অনেকে বলে থাকেন, নবীযুগে থাকলে কত যুদ্ধে যেতাম। আবার ইংরেজ খেদাও আন্দোলনের গল্প শোনে বলেন, আমরা ইংরেজদের দাঁড়াতেই দিতাম না।
মনের ভেতরে এমন অনেক জিদ আছে মানুষের মধ্যেই। বর্তমানে দেশে মুক্তযোদ্ধাদের প্রতি একটা সম্মানবোধ কাজ করে। যেহেতু চাকরি-বাকরিসহ নানা জায়গায় মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা মূল্যায়ন পাচ্ছে-এসব দেখে অনেকে বলেন, একাত্তরে জন্ম নিলে নিশ্চিত রাষ্ট্রের জন্য যুদ্ধ করতাম।
প্রকৃত অর্থে, একজন দেশযোদ্ধা, মুক্তির জন্য লড়াইয়ের সাহসী সন্তান-তিনি কোনো কিছুর আশা করে যুদ্ধ করেন না। একটাই চাওয়া থাকে, মানুষের মুক্তি। বাংলাদেশ হয়তো স্বতুস্ফূর্ত মুক্তিপাগল মানুষের অগ্রসর চিন্তা না থাকলে দেশ স্বাধীন হতো না। এখনও পাকিস্তান চিন্তার মানুষের অভাব নেই দেশে। সরাসরি পাকিস্তান চেয়েছিল এমন অনেক মানুষও আছে। আবার ৪৭-এ দেশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ ভারতের সঙ্গে থাকুক-এটা অনেকেই চেয়েছিলেন।
বুধবার (৫ জানুয়ারি ২০২২) মাধবপুর উপজেলার ৭ নং জগদিশপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যারা নির্ধারিত প্রতীকে লড়াই করছেন সবাই আশা করছেন তিনি নির্বাচিত হবেন। দিনশেষে হয়তো একজনই টিকে থাকবেন। শ্রম, ঘাম, শীতের রাতের প্রচণ্ডতর মেহনত সব বিফলে যাবে-এমন কথা বলা ঠিক না। জনতার জন্য ভালোবাসা অটুট থাকুক সবসময় এমন প্রত্যাশা আমি সবসময় করি। অতীতে যারা বার বার প্রতীক নিয়ে লড়াই করে পরাজিত হয়েছেন তাদের অনেকেই পরে নির্বাচিতও হয়েছেন। আমি শুভ কামনা জানাই যারা জনকল্যাণের মানসে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
ভোট আর দেশপ্রেম মানে কী? সত্যিকার অর্থেই আপনার মধ্যে দেশপ্রেম আছে কিনা কীভাবে বুঝবেন? যেকোনো তুচ্ছ কারণে যদি আপনি নিজের গ্রামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন, পাশের মানুষের কল্যাণচিন্তা যদি আপনার মধ্যে কাজ না করে, অর্থ কিংবা অন্য কোনো দুশমনি জিইয়ে রাখার জন্য গ্রামের বিরুদ্ধে যদি অবস্থান নেন-তাহলে সেটাই গ্রামবিরোধিতা। প্রকৃতঅর্থে আপনার মধ্যে সেই দেশপ্রেম বলতে যা আছে তা খুবই ক্ষীণ। হ্যাঁ, বাস্তবিক কোনো ইস্যু থাকতেই পারে তা অবশ্য ভিন্ন।
বাংলাদেশ জন্মে ৫০ বছর উদযাপন চলছে দেশে। ইতোমধ্যে আমরা স্বাধীনতা লাভের রসবোধে উজ্জীবিত আছি এই প্রমাণও দিচ্ছি। কিন্তু দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হলো, আমাদের খড়কী গ্রামে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও একজন চেয়ারম্যানের মুখ দেখতে পারলো না। এটা মূলত কার দোষ? ভালো প্রার্থীর অভাব? নাকি আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি।
শুধু একটি গ্রাম একত্র হলেই চেয়ারম্যান খড়কী গ্রামের মানুষের দ্বারে রেখে দেয়া সম্ভব। এরপরও খাটুরা ও বরগ দুটো গ্রাম পাশে আছেই। তাহলে কীসের জরা? কীসের ভয়? কীসের আতঙ্ক? হত্যা ও খুনোখুনির চর্চার পথ বন্ধ করার কি কোনো উপায় আমাদের সামনে নেই?
শ্রদ্ধাভাজন মুরুব্বিয়ান
আমি বা আমরা মুরুব্বিদের ভালোবাসি। নবীজী যে শিক্ষা দিয়েছেন আজীবন সে শিক্ষা বুকে ধারণ করে সবাইকে সম্মান করে আসছি। মরুব্বিগণই পারেন-গ্রামকে একটি কথায় একত্র করতে, এক ভালোবাসায় উজ্জীবিত করতে, একসুতোয় আগলে রাখতে। অন্তত সাধারণ মানুষের মধ্যে গ্রামপ্রীতির নজির স্থাপন করে যেতে পারেন।
ভোট আমানত
নির্বাচনকে হেলা করা উচিত নয়। ভালো মন্দ যাচাই করে একজন সুশীল, শিক্ষিত ও কাজের মানুষকে ভোট দেয়া উচিত। প্রতিবেশির প্রতি আমাদের দায়িত্ব কী? প্রতিবেশিকে হারিয়ে দেয়ার চিন্তা নিজেই হেরে যাওয়া। প্রতিবেশি জেগে উঠলে আপনিও জাগতে পারবেন। আপনার ভেতরে জেগে ওঠার স্বপ্ন কাজ করবে। আল্লাহ আমাদেরকে ভালো মানুষের স্বপ্নসারথি হওয়ার তাওফিক দিন।
খড়কীর প্রার্থী
একজনই নির্বাচন করছেন খড়কী, খাটুরা ও বরগ এলাকা থেকে। ভাই হুমায়ুন কবির। তাঁর বাবা আমাদের চাচা জনাব আঞ্জব আলী রহ.ও বার বার চেয়ারম্যান পদে লড়েছেন। গ্রামের মানুষ ভোটও দিয়েছে। কিন্তু শেষতক তিনি জিততে পারেননি। মূলত আমরাই হেরেছি। এর আগে আমাদের মাহফুজ দাদা, মাওলানা শরীফুদ্দীন রহ., আমার বাবা হাজী আমির হোসাইন রহ., আমাদের রমজান চাচা গ্রামের প্রার্থী হিসেবে লড়েছেন। এবার একটা সুযোগ আছে। গ্রামের সম্মান ফিরিয়ে আনাটা জরুরি। সব্বাই জানে গ্রামের মানুষ এক নয়। ভোট দিয়ে আপনি প্রমাণ করতে পারেন- আমরা প্রয়োজনে এক হতে পারি। একজন হুমায়ুন কবির জিতে গেলে আমাদের কোনো ক্ষতি নেই। তিনি কোনো গোষ্ঠীর প্রার্থী না। কারণ, জিতলে তিনি হবেন খড়কী গ্রামের পক্ষ থেকে জগদিশপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান। আমাদের সবাইকে শুভ বুদ্ধির উদায় হোক। নিজের আমানত প্রয়োগ করতে গিয়ে যেন আমরা ঈমানহারা না হই।
Leave a Reply