আদিব সৈয়দ : একজন আলোকিত মানুষের নাম বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। তিনি কেবল একজন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাঙিয়ে তুলেননি। তিনি লালসবুজের এই দেশটি আমাদের হাতের মুঠোয় এনে দিতে সার্বক্ষণিক এবং ধারাবাহিক সহযোগিতা করে আসছিলেন। খুব কাছে থেকে সাহস দিয়ে শেখ মুজিবকে উজ্জীবিত রেখেছিলেন।
১৯৩০ সালের এ দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মাত্র তিন বছর বয়সে বাবা শেখ জহুরুল হক ও পাঁচ বছর বয়সে মা হোসনে আরা বেগমকে হারান ফজিলাতুন্নেছা। চাচাত ভাই শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বেগম তার বিয়ে হয়। বেগম মুজিব ছিলেন মনেপ্রাণে একজন আদর্শ বাঙালি নারী। অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা, শান্ত, অসীম ধৈর্য ও সাহস নিয়ে জীবনে যে কোনো পরিস্থিতি দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবেলা করেছেন। তার তেমন কোনো বৈষয়িক চাহিদা ও মোহ ছিল না। স্বামীর রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত দানশীল ও অতিথিপরায়ন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের রোগে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, কারাগারে আটক নেতাকর্মীদের খোঁজ-খবরাদি নেয়া ও পরিবার-পরিজনদের যে কোনো সংকটে পাশে দাঁড়াতেন বেগম মুজিব। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যাকালে পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে ঘাতকরা তাকেও নির্মমভাবে হত্যা করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে বলেন, জাতির পিতার জন্য প্রেরণা, শক্তি এবং সাহসের এক উৎস ছিলেন বঙ্গমাতা। স্বামীর সকল সিদ্ধান্তে মনস্তাত্ত্বিক সহযোগিতা ছাড়াও বঙ্গমাতার পরামর্শ অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হয়েছে। জাতির অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বঙ্গমাতার পরামর্শ জাতির পিতাকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করেছে। জেলখানায় দেখা করতে গেলে আব্বা তাঁর মাধ্যমেই দলীয় নেতা-কর্মীদের খোঁজ-খবর পেতেন। আব্বার দিক-নির্দেশনা আম্মা নেতা-কর্মীদের পৌঁছে দিতেন। আব্বা কারাবন্দী থাকলে সংসারের পাশাপাশি সংগঠন চালানোর অর্থও আমার মা যোগাড় করতেন। বাবার কোন কাজেই মা প্রতিবন্ধক নয় বরং সহায়ক ছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার মা চাইলে স্বামীকে সংসারের চার দেয়ালে আবদ্ধ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি কখনও ব্যক্তিগত-পারিবারিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে তাকাননি।
আমার বাবা-মায়ের মধ্যে বোঝাপড়াটা খুব ভাল ছিল। বাবাকে কোন পরামর্শ দিতে হলে আমিই চলে যেতাম মা’র মিশন নিয়ে। বাবা ভিড়ের মধ্যেও আমাকে একবার দেখলেই বুঝতে পারতেন ‘জরুরী কোন ম্যাসেজ আছে। বঙ্গমাতাই বোধ হয় সবচেয়ে আগে জানতেন, এই দেশ একদিন স্বাধীন হবে। আম্মার উৎসাহেই জাতির পিতা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ লিখেছিলেন এবং জাতির পিতার ডায়েরিগুলো বঙ্গমাতাই সংরক্ষণ করে রাখেন, যা পরবর্তীতে পুস্তকাকারে প্রকাশ হয়।
সত্যিকার অর্থেই বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব একজন খাঁটি মানুষের প্রতিকৃতির নাম। তিনি কেবল মজিবকেই সাহসী করে যাননি বরং গোটা বাংলাদেশ গঠনের পেছনেই তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমরা আশা করবো, বিশেষত নারীদের জন্য তাকে জানার সব ধরনের সুযোগ তৈরী করা হবে।
Leave a Reply