বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০২:৫৭ অপরাহ্ন

বারী আইল্যান্ড সমুদ্র সৈকতে কিছুক্ষণ

বারী আইল্যান্ড সমুদ্র সৈকতে কিছুক্ষণ

বারী আইল্যান্ড সমুদ্র সৈকতে কিছুক্ষণ

শেখ নূরে আলম হামিদী

ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম সিটির কাছে ছোট্ট একটি শহর ওয়ালছল। এখানে আমরা কজন সমমনা বসবাস করি এর মধ্যে মাওলানা হাফিজ কারী মুদদাসিসর আনওয়ার, মাওলানা হাফিজ মুহিবুর রহমান মাছুম, আলহাজ জামিল বদরুল, আমাদের এই ছোট্ট কাফেলা যখন যেখানে মন চায় ছুটে বেড়াই।

ইংল্যান্ডে এখন সামার হলিডে চলছে, বাৎসরিক বড় ছুটির সময় সবাই যার যার মত বেড়াতে যান আমরা ও এর ব্যতিক্রম নই। গতকাল রাত ১১ টার সময় হটাৎ টিক হয় আজ সকাল ৮ টার সময় আমরা রওয়ানা করব বারী আইল্যান্ডের সমুদ্র সৈকতের উদ্দেশ্যে।

যতা সময় রওয়ানা দিয়ে ওয়ালছল থেকে প্রায় ১৫০ মাইল দূর সফর করে কাংখিত গন্তব্যে সহজেই পৌঁছে যাই। যতা স্থানে গাড়ি পার্কিং করে কাপড় এর বাগ,বসার চেয়ার, হালকা খাবার নিয়ে আমরা সুজা চলে গেলাম সমুদ্র সৈকতে।

আল্লাহ পাকের কুদরতি নিদর্শন সমুদ্রের কাছে গিয়ে উপভোগ করতে খুব ভাল লাগে। সমুদ্রের গর্জন কান পেতে শুনতে খুব ভাল লাগে। ঢেউ এর তালে তালে সাঁতার কাটতে খুব ভাল লাগে। সমুদ্রের বিশালতার সামনে দাড়ালে মালিকের বিশালতার কথা স্বরন হয় আর মালিকের বিশালতার মধ্যে হারিয়ে যেতে মন ব্যাকুল হয়ে উঠে।

গত সপ্তাহে আমাদের শ্রদ্ধাভাজন প্রিয় ব্যক্তিত্ব কমিউনিটি লিডার কে এম আবু তাহের চৌধুরী ভাই উনার ছোট মেয়েকে নিয়ে ট্রেনে করে লন্ডন থেকে ব্রাইটন সমুদ্র সৈকতে যেয়ে সাঁতার কাটা আমাকে খুব অনুপ্রাণিত করেছে। উনি যদি এ বয়সে এত সুন্দর সাঁতার কাটতে পারেন তাহলে আমরা কেন পারবনা।

আমরা আর লোভ সামলাতে পারলাম না। একে একে সবাই নেমে পড়লাম সাগরের উত্তাল তরঙ্গে। কিছুক্ষণ পর পর সাগরের বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে আমাদের উপর, আর কি যে ভাল লাগছে আমাদের তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবনা, আশা করি আপনারা বুঝে নিবেন।

ইংল্যান্ডের আবহাওয়া ভাল পাওয়া অনেক ভাগ্যের ব্যাপার। আল হামদুলিল্লাহ আজ আমরা রুদ্র উজ্জ্বল একটি দিন পেয়ে গেলাম যার দরুন অনেক্ষণ সাগরের ঢেউ এর তালে তালে মিতালী করে সাঁতার কাটার সুযোগ হল। সাঁতার কাটা খুব ভাল একটা এক্সারসাইজ কিন্তু এ দেশে সময় ও পরিবেশ এর জন্য খুব কমিই ভাগ্য জুটে। দেশের পুকুরে গোসল করা সাঁতার কাটা খুব মিস করি।

এরিমধ্যে আবহাওয়ার পরিবর্তন। ঠান্ডা অনুভব করায় আমরা উপরে উঠে কাপড় পরিবর্তন করি। সাজানো গোছানো সুন্দর এই ছোট্ট শহরটা ঘুরে ঘুরে দেখলাম। আবার সূর্যের উত্তাপ ছড়াচ্ছে দেখে সমুদ্রের কাছে গিয়ে বসলাম কারো মন ছেড়ে আসতে চাচ্ছে না। মন মাতানো হাওয়া, চতুর্দিকে রংবেরঙের ফুলের বাহার, সব বয়সের আনন্দিত মানুষের কোলাহল, ফিস এন্ড চিপস এর মনকাড়া ঘ্রাণ, আর ক্লান্তিতে সবার চোখে তন্দ্রা চলে এসেছে।

সময় গড়িয়ে যাচ্ছে তাই এবার ফেরার পালা। দুপুরের খাবারের জন্য ফেরার পথে ওয়েলস এর রাজধানী কার্ডিফ শহরের ফেভারিট টার্কিস রেস্টুরেন্ট সারেতে মধ্যাহ্নভোজ ও জুহরের নামাজ আদায় করলাম। তাদের খাবারের প্রশংসা না করলে কৃপণতা হবে। আরেকটা বিষয় খুব ভাল লেগেছে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা ভাবে অজু ও নামাজের ব্যবস্থা রেখেছে। আল্লাহ পাক তাদেরকে উওম বদলা দান করুন।

সাথীদের এবার ডিজেট ও আইসক্রিম খাওয়ার ইচ্ছা। আমরা চলে গেলাম কার্ডিফ এর প্রথম হোম মেইড সিরিয়ান সুইট সপ আল সামস সুইটস এন্ড আইসক্রিম সপে (দোকান)। সেখানে ঐতিহ্যবাহী বাকলাবা, কুনাফা ও আইসক্রিম খাওয়া হল।
এবার সাথীদের আব্দার ব্রিটেনের নামকরা চা” চায়ে ওয়ালা থেকে চুমুক দিতে হবে। অসুবিধা কোথায় হয়ে যাক এক চুমুক।

এরি মধ্যে আমাদেরকে দেখে শ্রীমঙ্গলের এক ভাই গাড়ি পার্ক করে আমাদের সাথে দেখা করলেন এবং বাসায় নেওয়ার জন্য খুব অনুরোধ করলেন আমাদের সময় সল্পতার দরুণ বিনয়ের সাথে উনাকে বুঝিয়ে বিদায় নিয়েছি কিন্তু উনার ভালবাসা হৃদয় ছুঁয়েছে। আজ থেকে ২৫ বৎসর আগে উনার সাথে তাবলিগে তিন দিন সময় লাগিয়েছিলাম উনি আজো মনে রেখেছেন। আল্লাহ পাক তাকে উওম বদলা দান করুন।

এবার সাথীদের কঠিন একটি আব্দার পান খেতে হবে। অপরিচিত শহর কোথায় পাওয়া যায়। আমি ফন করলাম আমার পরিচিত এক আত্মীয়কে, উনি আর ফন রাখছেননা, ঘরে যেতে হবে বলে। অনেক্ষন বুঝানোর পর আরেক দিন সময় করে আসব বলে বিদায় নিলাম। মুদদাসিসর ভাই ফন করলেন উনার একজন পরিচিত আত্মীয়ের কাছে, উনি ঘরে নেই পড়ানোতে, এরপর ও ছাড়তে চাচ্ছেন না, ঘরে যাওয়ার জন্য খুব অনুরোধ করেন উনাকেও বুঝিয়ে আমরা বাঙালি এক দোকানের সন্ধান নিয়ে সাথীদের পানের আব্দার কিছুটা লাগব হয়।

এবার ফেরার পথে আত্মীয়ের তথ্য অনুযায়ী “কার্ডিফ বে” সুন্দর একটি দর্শনীয় স্থান দেখার সৌভাগ্য হয়। আসলেই খুব সুন্দর একটা বড় লেইক, দিঘির মত চতুর্দিকে পানি থই থই করছে। পড়ন্ত বিকেলে বোট ভাড়া করে ভ্রমণ বিলাসীরা সমুদ্রের আমেজ উপভোগ করছে। বিভিন্ন বড় বড় খাবার দোকানগুলা পসরা সাজিয়ে বসে আছে। লন্ডন আইর মতো উঁচু চড়কি মাথার উপর ঘুরছে। সব মিলিয়ে ভ্রমন পিপাসুদের জন্য পারফেক্ট পেলেইস। বাচ্চাদের মন জয় করার সুন্দর একটা জায়গা। ইংল্যান্ডে বসবাস কারি ভাই বোন যাদের সময় ও সুযোগ আছে আপনারা এই দুইটা জায়গায় বেড়াতে পারেন আশা করি ভাল লাগবে।

এবার ঘরে ফিরার পালা তবে সময়ের অভাবে বাংলাদেশী অধ্যুষিত কার্ডিফ এর লং সাইডে যাওয়া হল না। একটি মসজিদে গেলেই দেশের অনেক মানুষের সাথে দেখা হয়ে যেত। অনেক আত্মীয়কে দেখার সুযোগ হত কিন্তু সময়ের অভাবে পারিনি বলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত। ইনশা আল্লাহ আগামীতে সময় নিয়ে আপনাদের সাথে দেখা করে যাব যদি আল্লাহ পাক হায়াতে বাঁচিয়ে রাখেন। সবাই ভাল থাকবেন। দোয়া করবেন। ইংল্যান্ডের ওয়ালছল শহর থেকে।
৩০-৭-২০২১. শুক্রবার

শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved 2018 shilonbangla.com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com