আজ (২৯ জুন ২০২১) আমার বাবা আলহাজ্জ্ব আমির হোসাইন রহ.-এর ইন্তেকালের একবছর পূর্ণ হলো। গত ২০২১ সালের ২৯ জুন তিনি চলে গেলেন পরপারে। তখন করোনায় লকডাউনে ছিল দেশ। বিধিনিষেধের মধ্যেই বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছিল। সেদিন প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়েছিল। অনেক বৃষ্টি। ছাতায় মানছিলো না। আমি একটি মুহূর্তের জন্যও ভাবিনি, বাবা চলে গেছেন। কখনো এটাও ভাবিনি, তার তো বয়স হয়েছে।
এই বয়সের অনেকেই স্বাভাবিকভাবেই চলে গেছেন। আমি কখনও বাবাকে একথাও বলিনি, আপনার অনেক বয়স হয়ে গেছে। কারণ, এতেও আব্বা হয়তো মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারেন। নব্বই ছুঁই ছুঁই মানুষটির সামনে আমাদের আট ভাই ও এক বোনের কেউ ভয়ে কথা বলতে পারতো না। গলা উঁচু করে কথা বলবার সাহস কেউ কখনও দেখায়নি। আমাদের সব তদবির থাকতো আম্মাকে ঘিরে। এখনও তা-ই হয়।
আব্বা কখনও কারও কাছে কিছু চাইতেন না। নিজে ছিলেন ধৈর্যের প্রতীক। এ ধৈর্য কোথায় থেকে তিনি আয়ত্ব করেছিলেন আমার জানা নেই। প্রচণ্ডরকম সংগ্রাম করে বেড়ে ওঠা মানুষটি ধরে নিয়েছিলেন, এত ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা করানোর মাঝখানে নিজের সুখ বলতে কিছু নেই। একটাই সুখ তাঁর, নিজের ছেলেদের কয়েকজন আলেম হয়েছেন। অনার্স-মাস্টার্স করেছেন অনেকে। বাবা মনে করতেন, ছেলে-মেয়েদের ঢাকায় পাঠিয়ে দিলে এলাকার কাইযা ফাসাদ তাকে ছুঁবে না। আমরা যখন বড় হলাম, এই বাবাই ঢাকায় দুই দিন-তিন দিন থাকতে রাজি হতেন না। একটা দিন কোনো প্রকারে থাকলে দ্রুত তিনি আবার নিজের গ্রামে ছুটে যেতেন।
একটা চালাকি করে বাবাকে কাছে রাখার জন্য রমজানে ইতেকাফের নামে বাবাকে ঢাকায় নিয়ে এলাম। সঙ্গে আমার বড় মামা ফজলুর রহমান মাস্টারকে (আল্লাহ তাকে হায়াতে তাইয়্যেবা দান করুন) ও নিয়ে এলাম। সবাই মিলে সেবার ঈদ করলাম ঢাকায়। এই আনন্দের কথা মনে হলে সবসময় ভালো লাগে।
ভাই-বেরাদর যেখানে আছেন, দয়া করে আমার বাবার জন্য দুআ করবেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে পরকালে ভালো রাখুন
রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা…
Leave a Reply