লা বী ব আ ব্দু ল্লা হ
নারীর কণ্ঠ নিয়ে যারা নতুন প্রশ্ন ও ফতোয়া জারি করছেন সংসদে যদি তারা ১০টি আসন পান এবং তিনটি মন্ত্রীর পদও৷ তাহলে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে নারীর কণ্ঠ এবং নির্বাচিত নারীদের কণ্ঠ নিয়ে তারা কী করবেন তা নিয়েও ভাবছি৷
ভাবছি হাজার হাজার মহিলা মাদরাসায় শত শত মুহাদ্দিস ও উস্তায বছরব্যাপী নারীর কণ্ঠে হাদীস শুনলেন এর কী ফতোয়া হবে! তাদের ইমামতি কি মাকরুহ হবে কি না!
উল্লেখ্য, ছেলেদের চেয়ে মহিলা বা বালিকা বা নারী আলেমা বেশী হচ্ছেন কওমী মাদরাসা থেকে৷ দাওরায়ে হাদীসের দরসে আমাদের তালেবাত বা ছাত্রীরা কি ইবারত পড়েন না? সেই কণ্ঠের কী হবে তাহলে? সব ঘরানারই তো মহিলা মাদরাসা রয়েছে বর্তমানে৷
নাশীদদশিল্পী যদি ছোট বাচ্চা বা আমরুদ হয় তাহলে তার কণ্ঠে ইসলামী সংগীতের কী হবে? ধরে নিলাম ইসলামী ঘরানার কোনো দল থেকে ইউপি চেয়ারম্যান হলেন এবং ভাইস চেয়ারম্যান নারী তাহলে তিনি কিভাবে কাজ চালাবেন নারী কণ্ঠ শ্রবণ ব্যতীত? ধরে নিলাম ইসলামী ঘরানার কেউ স্পিকার হলেন সংসদে৷ নারী সংসদ সদস্যের কণ্ঠ শ্রবণে তিনি কী করবেন তখন!
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের ২০ বা ৩০ পার্সেন্ট যদি নারী সদস্য বাধ্যতামূলক করা হয় এবং তা কার্যকর করা হয় তাহলে সেই দল কীভাবে নারী কণ্ঠ ছাড়া দল চলাবেন? যদি মিটিং এ নারীকে রাখাও বাধ্যতামূলক করা হয় তাহলে কী হবে তখন৷ ইসলামী ঘরানার একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হলেন৷ পুরুষ ও পীর সাহেব৷ তিনি নারী পুলিশের সাথে নারী সৈনিকের কণ্ঠ নিয়ে কতই না বিপদে পড়বেন!
থাক আমি নারী কণ্ঠ জায়েয বা নাজায়েয নিয়ে ভাবছি না৷ ভাবছি যারা রাজনীতি করেন, যারা সংবাদপত্রে কাজ করেন তারা নারীর কণ্ঠ নিয়ে দেওবন্দের ফতোয়া বা অন্য কারোর বীরুদ্ধে বলার আগে চিন্তা করুণ আপনি এই দেশে এই সমাজে নারীর কণ্ঠ ছাড়া চলবেন কীভাবে?
মহিলা মাদরাসার কোনো ছাত্রী যদি একটি জাগরণী সংগীত গেয়ে থাকেন তাহলে সেটি ঘরোয়া পরিবেশে হয়েছিলো৷
একটি পবিত্র মজলিসে৷ হাদীসের দরসে৷ খতমে বোখারীর আয়োজনে৷ সেই পবিত্র অঙ্গনে একজন সাহসী নারী দীনি চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে যদি কারোর শানে একটি সংগীত গেয়ে থাকেন তাহলে আপনারা ফতোয়া তালাশ করার আগে আপনি কতটা শরঈ পর্দা ও হিজাব এবং কতটা চোখ হেফাজত করতে পারেন এই সময়ে সেটি নিয়েও একটু ভাবতে পারেন৷ ভাবতে পারেন আমি যে বিষয়গুলো বললাম আরও শত বিষয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে তা নিয়েও৷
আপনিও নারীকে পর্দার আড়ালে রেখে ওয়াজ করছেন৷ মুরীদ করে তাসাউফের সবক তলকীন করছেন৷ দরসে হাদীস দিচ্ছেন৷ অফিস আদালতে বাধ্য হয়ে বা অনিচ্ছায় কথা বলছেন নারীর সাথে৷ সেইসব নিয়েও একটু চিন্তা করবেন আশা করি৷
আল্লামা মুহাম্মদ মামুনুল হক সেই ছাত্রীর কণ্ঠে গীত জাগরণী সংগীত শ্রবণকালে নারী সমাজেও ইসলামী চেতনার কথা ভেবে বা লজ্জায় বা নিজের প্রশংসা শ্রবণ করে অশ্রুসিক্ত ও আবেগী হয়ে মাথা নিচু করে ছিলেন৷
মুহাম্মুদ মামুনুল হক একটি মহিলা মাদরাসায় সহীহ বোখারীর শেষ হাদীসের দরস দিয়েছেন এটি ইতিবাচক৷
পীর সাহেব চরমোনাই শায়খ ফজলুল করীম রহ.-এর মাধ্যমে মিফাতাহুল জান্নাত মহিলা মাদরাসা গলগন্ডা ময়মনসিংহে একটি দরসের আয়োজন করেছিলাম একবার৷ সহীহ বোখারীর দরস৷ তিনি ছাত্রীর হাদীসের ইবারত পড়া শ্রবণ করে হাদীসের তকরীর করেছেন৷ আমি পাশে বসা ছিলাম৷ সেই ছাত্রী এখন মিফতাহল জান্নাতের শিক্ষিকা৷ আমি তখন ছিলাম নায়েবে তালীমাত সেই মাদরাসার৷
আল্লামা মুহাম্মদ মামুনুল হক নারী অঙ্গনেও ইসলামী চেতনা বিকাশে কাজ করবেন সেই প্রত্যাশা রাখছি৷ যারা সমালেচনা করছেন তারা দীনদারী থেকেই করছেন হয়তো৷ আপনাদেরও ধন্যবাদ৷
মনে রাখবেন মুহাম্মুদ মামুনুল হকের পরিবারে হাফেয ও হাফেযার সংখ্যা প্রায় শত ৷ আদর্শ পরিবার৷ অনন্য পরিবার৷ নারীর পর্দা ও হিজাব তিনিও জানেন৷
তিনিও ফাতওয়া পড়েছেন এবং ফাতওয়া সম্পর্কে অগাধ ইলম রাখেন এবং ইফতা বিভাগেও তিনি দরস দেন৷
পূর্ণ ইসলামী পরিবেশ ও সর্বস্তরে নারীর যথাযথ অধিকার, শরঈ হিজাব, নারীর জন্য পৃথক সব আয়োজন খেলাফতে রাশেদার মডেল বাস্তবায়ন ছাড়া কঠিন৷ মুহাম্মদ মামুনুল হক সেই স্বপ্ন নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন৷
লেখক : কলামিস্ট ও শিক্ষক
ইবনে খালদুন ইনস্টিটিউট ময়মনসিংহ থেকে
Leave a Reply