মনযূরুল হক :: যোগ্যতা একটি অলীক বস্তু। ধরা যায় না, ছোয়াঁ যায় না—দৃশ্যমান নানা তৎপরতার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় কেবল। অনেক সময় এমন হয়, একজন নিজেকে খুব যোগ্য ভাবছেন, ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন, আশেপাশের সবাইকে ভাবছেন ছারপোকা, কথায় কথা বলছেন—‘এই জন্যেই জাতির উন্নতি হয় না’, তারপর যাবতীয় সিস্টেমকে তুলোধুনো করছেন। ভাবখানা এমন, পারলে তিনি দুনিয়াটাকে গ্রীষ্মের প্রখর রোদ্দুরে উল্টে-পাল্টে ভালো করে শুকিয়ে তরতাজা করবেন।
এ-জাতীয় লোকজনের সবাই যে অযোগ্য হন, তা নয়—যোগ্যও আছেন। কিন্তু তারা তাদের পাহাড়সম যোগ্যতা নিয়ে পেরেকর মতো অচল হয়ে থাকেন—আপন আলয় থেকে নড়তে চান না। বুক ভরা অভিমান নিয়ে তারা অপেক্ষা করেন—কবে তাদের যোগ্যতার কদর হবে।
তারা ছুটতে রাজি নন—যেন সবাই ইলহাম পেয়ে তার সান্নিধ্যে ছুটে আসবে। কাউকে বলতে রাজি নন—যেন সবাই অদৃশ্য স্বর থেকে জানতে পারবে। তারা কোথাও নিজেকে তুলে ধরতে চান না—যোগ্যতার জারিজুরি উপস্থাপনের জন্য মুফতে একটা পোর্টফোলিও তৈরির কোনও চেষ্টাই তারা করেন না।
তারা নিজেদের ভাবেন জমজমের মিঠা কূপ—অজানা কোনও মাধ্যমে খবর পেয়ে হাঁসফাঁস করতে করতে তাবৎ পিপাসার্ত যেথা দৌড়ে আসবে। আর দেখবে একটা বালতি আর রশি আগে থেকেই রেডি করা আছে—তারা শুধু ভিড় ঠেলে কোনওমতে একফোঁটা জল পেয়েই তৃপ্তি-ধন্য হবে।
এইসকল অবাস্তব বিলাসী কল্পনার ফাঁদে পড়ে কত যোগ্যজন অকালে হারিয়ে যায়—অযোগ্য কিংবা কম যোগ্য ব্যক্তি তখন ‘লিংক আপের’ জোরে জায়গা দখল করে থাকে।
যোগ্য ব্যক্তি যদি মেঘের মতো না-হন—যিনি তৃষিতের দুয়ারে গিয়ে গিয়ে বারি বর্ষাবেন; যদি মূর্খ জাতির উন্নয়নে তিতিক্ষা খরচ না-করেন—যেন উষর মরুকে উদ্যানে পরিণত করা যায়; বদনামের আগুনে পুড়ে পুড়ে যদি এগিয়ে যাওয়ার জ্বালানি সরবরাহ করতে না-পারেন—যেন কর্মমুখর ট্রেন কখনও থমকে না-দাঁড়ায়; যদি যোগ্যতার মাঠ কর্ষিতই না-হয়—তাহলে—
তাহলে একদিন ফসলের মৌসুম তো আসবে—কিন্তু মাঠ থাকবে ফাঁকা, পাকা ধান সে দেখবে না। বসন্ত তো আসবে—কিন্তু ফুলের সুগন্ধি তার হৃদয়কে সুরভিত করবে না। শ্রাবণ-মেঘের গর্জনই শুনবেন শুধু—আসমানি জল-স্নানে শুচিশুদ্ধ হওয়ার সৌভাগ্য তার হবে না।
এই জাতির উন্নতিও আর হবে না…
Leave a Reply