জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। ২০ দলীয় জোট ত্যাগ করে এখন নিজ ঘরে ফিরেছে। দীর্ঘ ২০ বছর যাবত জোটের সাথে থাকার পর জোটের কিছু খামখেয়ালীপনায় শেষপর্যন্ত আর বনিবনা হয়নি। সংবাদ সন্মেলনের মাধ্যমে জোট ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
প্রথমে সংসার ছিল চারদলীয় জোটের। এরপর সদস্যসংখ্যা বাড়তে থাকে। শেষমেষ ২০ দলীয় জোটে দাঁড়ায়। এই ২০ দলের মধ্যে প্রায় সকল দলেরই অবস্থা শোচনীয়। কোনরকম জান নিয়ে আছে। তাও সেটা অক্সিজেন নির্ভর।
তবে জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম আমাদের প্রাণের সংগঠন। বিশেষ করে ওলামায়ে কেরামের সাথে এ সংগঠনের আত্মার সম্পর্ক। ২০ দলীয জোটে যতগুলো দলছিল, তারমধ্যে জমিয়ত ওলামায়ে ইসলামই সৌর্যবীর্যে সবার থেকে এগিয়ে। কেননা, এই সংগঠন সবচেয়ে পুরনো। এর ঐতিহ্য- অবদান সীমাহীন। পুরো ভারতবর্ষের পরতে পরতে এই জমিয়ত উলামায়ে ইসলামের অবদান দেখা যায়। এই উপমহাদেশের মাটি- মানুষের সাথে মিশে আছে।
আজকের কথা নয়। জমিয়তের জন্ম একশত বছর আগে। ১৯১৯ সনে জমিয়ত প্রতিষ্ঠিত হয়। এমন এমন মহা মনীষীগণ জমিয়তের হাল ধরেছিলেন, যারা জগৎজোড়া ব্যক্তি ছিলেন। আবার তাদের অবদানও ছিল বিশ্বব্যাপি। বিশেষ করে এই বিশ্ব পরিক্রমায় তাদের খ্যাতি ছিল।
মোটকথা জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম কোন যেন তেন সংগঠন নয়। আর যেমন- তেমন ব্যক্তিদের দৃষ্টি এখানে পড়েনি।বরং বিশ্ব বরেণ্য ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত ছিল এ সংগঠন। এজন্য এর সাথে কারো কোন তুলনা হয়না। এর সাথে কারো কোন ওজন করা যায় না।
থাকতে পারে কেউ। তাদের হয়তো সংসদীয় আসন বেশী। কিন্তু সংসদীয় আসন বেশী হলেই তারা সেই ঐতিহ্য সন্মানের উচ্চমার্গে যেতে পারেনা। জমিয়ত উলামায়ে ইসলামের যে অবদান তাতে ওই সকল সংগঠন থেকে শ্রেষ্ঠ মর্য্যাদার।
এক. জমিয়ত সবচেয়ে পুরনো সংগঠন। শতায়ু পার হয়েছে।
দুই. জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। ভারতবর্ষের আনাচে- কানাচে যখন ব্রিটিশদের অত্যাচার জলুমে মানুষ নিস্পেসিত। সেই সময়ে জমিয়ত এক মহীরুহে অবতীর্ণ হয়। তারা এদেশ থেকে ব্রিটিশদের তাড়িয়ে স্বাধীনতার সূর্য উদয় করেন।
তিন, জমিয়ত ১৯৭১ সনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখেছে। জমিয়ত হলো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। যাদের এখনো দিল পরিস্কার নয়।পড়ে দেখুন মুক্তিযুদ্ধ জমিয়ত বইটি।
বিশেষ করে জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ এই বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় ভুমিকা পালন করেছিল।ফেদায়ে মিল্লাত আসআদ মাদানী রহ, তিনি ভারত জুড়ে ৩০০ মিছিল- মিটিং এবং সভা-সমাবেশ করেন।
সবচেয়ে বড় আরো পদক্ষেপ ছিল। যখন যুক্তরাষ্ট্র সপ্তম নৌবহর প্রেরণ করেছিল। সেই সময়ে ফেদায়ে মিল্লাত আসআদ মাদানী পঞ্চাশ হাজারের অধিক মানুষ নিয়ে দিল্লিতে আমেরিকার দুতাবাস ঘেরাও করেন।
ঠিক সেই সময়ে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সাথে বাংলাদেশী আলেম- উলামার সাথে গভীর প্রীতি ছিল। এদেশের জমিয়তের কর্ণধরগণ তাঁর পরামর্শে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্হান নেন।
চার, জমিয়তের যারা প্রতিষ্ঠাতা। জমিয়তকে যারা লালন পালন করেছেন, সকলেই মহান ব্যক্তিত্ব। যারা দেশকে গড়েছেন। এই উপমহাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে জোরালো ভুমিকা রেখেছেন।
যাইহোক, যখন জমিয়ত চারদলের সাথে যোগ দেয় তখন থেকেই অনেকে বলেছিল, জমিয়ত তার ঐতিহ্য নষ্ট করতে যাচ্ছে। কেননা, জমিয়তের সমকক্ষ তারা কেউ নয়। আস্তে আস্তে ওদের আসল চেহারা প্রকাশ পেতে লাগল।
ওরা এতদিন জমিয়তের সাথে বিমাতাসুলভ আচারণ করেছে। কোণঠাসা করা হয়েছে। কোন ধরনের সুযোগ সুবিধা আদায় করতে পারেনি। অথচ এই জমিয়ত তথা আলেমদের কারণে তারা ক্ষমতায় গিয়েছিল। কিন্তু ভুলেগেল সে অবদান। অনেক নেতা কর্মি মুখ বুজে ছিল। কিছু বলেনি।
বিগত ১৪ জুলাই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এসেগেল। এবার জমিয়তের সংবাদ সম্মেলন। বহু ব্যাথা- বেদনার কথা অবলীলায় বলা হল। আর আমরা নেই ২০ দলীয় জোটে।
জমিয়তের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জনাব মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া সাহেব অত্যন্ত দুরর্দশি এক ব্যক্তিত্ব। দলের বিপদের সময়ে হাল ধরেছেন। মুলতঃ এই মহান ব্যক্তির অক্লান্ত পরিশ্রম। তাঁর প্রচেষ্টায় যেন জমিয়ত স্বমহিমায় ফিরেছে।
এর আগে একবার বাহাউদ্দিন যাকারিয়া সাহেবকে দেখেছিলাম। মুফতী ওয়াক্কাস সাহেব জেলখানায়।তখন তিনি দলকে টেনে তুলেছিলেন। পুরো বাংলাদেশ সফর করে দলকে এক লক্ষ্য মাত্রায় নিয়ে আসার পিছনে তাঁর যথেষ্ট অবদান ছিল। এই সঙ্গীন মুহুর্তে তিনি আবার জমিয়াতের হাল শক্তভাবে ধরেছেন।
একদম সঠিক সিদ্ধান্ত। অনেক আগেই ওদের সংসার থেকে চলে আসার প্রয়োজন ছিল। একটু দেরী হয়েছে।তবুও পূণ্যের কাজ হয়েছে। জমিয়ত কিন্তু এবার এগিয়ে যাবে। আকাবির- আসলাফের নকশে কদমে ছুটে চলবে তারা। আল্লাহ তায়ালা রহম করুন। আমিন।
লেখক :: শিক্ষক ও কলামিস্ট
Leave a Reply