বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০২:৪৬ অপরাহ্ন

ঘাসের তৈরি ঝুলন্ত সেতু

ঘাসের তৈরি ঝুলন্ত সেতু

ঘাসের তৈরি ঝুলন্ত সেতু শীলনবাংলা ডটকম: ঝুলন্ত সেতু বা সাসপেনশন সেতু একটি সেতু যার একটি ডেক সেতুর দুই প্রান্তের স্তম্ভের মধ্যে ঝুলন্ত ধাতব মোটা তারের সঙ্গে উল্লম্ব সাসপেনশন তারের নিচে নিক্ষিপ্ত হয়। পেরুর কুজকো রাজ্যের পাশ ঘেষে বয়ে গেছে আপুরিমাক নদী। এই নদীর অববাহিকায় বাস করছে হাজার বছরের পুরানো ইনকা সভ্যতার উত্তরসূরীরা। নদীর ওপরে চলাচলের জন্য যে সেতু ব্যবহার করেন। সেটা তারা তৈরি করেন ঘাস দিয়ে।

কিউএসওয়াচাকা সেতুটির পুরোটা বোনা হয় হাতে এবং এই সেতু টানা ছয়শ বছর ব্যবহৃত হয়েছে। ২০১৩ সালে এই সেতুটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করা হয়। ইনকা সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের সংযোগ হিসেবে কাজ করত এই সেতুগুলো। এই সেতু বানানোর প্রথাটি ইনকা সম্প্রদায়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম চলে আসছে।

প্রথা অনুযায়ী এই সেতু নির্মাণে যুক্ত থাকতে পারেন শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষরা। তবে নারীরা পাহাড়ের ওপর বসে ছোট ছোট দড়ি বোনার কাজ করেন। নতুন সেতু বসানোর আগে পুরুষরা, পুরান সেতুটি সরিয়ে নেন। তারা ছোট ছোট দড়িগুলোকে একসঙ্গে করে বোনেন। এই সেতুর প্রধান ভিত্তি হিসেবে কাজ করে ছয়টি বড় আকারের ত্রিপাল দড়ি। যেগুলোর প্রতিটি প্রায় ১ ফুট মোটা হয়ে থাকে। ১২০টি চিকন দড়ি পেঁচিয়ে এটি তৈরি করা হয়।

প্রতিটি পরিবারকে দুই স্তরের দড়ি সরবরাহ করতে হয়। কোয়া ইচু নামের বিশেষ ধরনের শক্ত ঘাস দিয়ে তৈরি করা হয় এই সেতু। প্রতিটি দড়ি বোনা হয় হাত দিয়ে। তার আগে প্রতিটি ঘাস পাথর দিয়ে পিটিয়ে সমান করা হয়। তারপর পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয় দীর্ঘক্ষণ। যেন সেতুটি নমনীয় থাকে।

যখন সবাই সেতু বানানোর কাজে ব্যস্ত থাকে তখন গ্রামের কেউ কেউ কাঠের চুলায় রান্নার আয়োজন করেন। পুরান সেতুটিকে কেটে নদীর পানিতেই ফেলে দেয়া হয়। কেননা এটি ঘাসের তৈরি হওয়ায় পানিতে পচে মিশে যাবে। প্রকৃতির কোন ক্ষতি করবেনা।

সেতুর জন্য বানানো মোটা ৬টি দড়ির মধ্যে ৪টি বসানো হয় সেতুর মেঝে হিসেবে। বাকি দুটো বসানো হয় কিছুটা উঁচুতে হাত রাখার জন্য। এবং এই ছয়টি দড়ি ঝোলানোর জন্য গিরিখাদের দুই প্রান্তে বিশালাকার পাথরের সঙ্গে শক্ত বাঁধা হয়। সঠিক মাপে দড়ি ঝোলাতেই সময় ব্যয় হয় সবচেয়ে বেশি।

এরপর কয়েকজন সাহসী ব্যক্তি এই দড়িগুলোর ওপর হেঁটে হেঁটে ছোট আকারের দড়ি দিয়ে বাকি সেতু বোনার কাজ করেন। এই কাজ তারাই করতে পারেন, যাদের কোন উচ্চতাভীতি নেই। তারা মূলত ছোট দড়িগুলো দিয়ে মেঝের সঙ্গে হাতলকে জুড়ে দেন।

সেতু নির্মাণের এই পুরো প্রক্রিয়ায় কোন আধুনিক সরঞ্জাম বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয়না। এখানে ব্যবহৃত হয় শুধুমাত্র ঘাস আর জনশক্তি। সূত্র: বিবিসি

শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved 2018 shilonbangla.com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com