শনিবার, ২৭ মে ২০২৩, ১২:২১ অপরাহ্ন

কলরব ছেড়ে দেয়ার প্রশ্নই আসে না, একান্ত সাক্ষাৎকারে আবু সুফিয়ান

কলরব ছেড়ে দেয়ার প্রশ্নই আসে না, একান্ত সাক্ষাৎকারে আবু সুফিয়ান

আইনুদ্দীন আল আজাদের হাত ধরেই সঙ্গীত জগতে আসা জাগরণী শিল্পী আবু সুফিয়ান একটি মামলায় ২৭ দিন জেলে বন্দী ছিলেন। একটি বিশেষ মামলায় গত ১৯ জুলাই’ ১৮ইং গ্রেফতার করা হন কণ্ঠশিল্পী, জাতীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন আইনুদ্দীন আল আজাদ কলরবের প্রধান পরিচালক হাফেজ মাওলানা আবু সুফিয়ান। ১৬ আগস্ট’১৮ ইং, জেলখানা থেকে মুক্তিলাভ করেছেন বিদ্রোহীশিল্পী এই শিল্পী। জেল থেকে বেরিয়ে তিনি কথা বলেছেন শীলনবাংলা ডটকমের সঙ্গে। আমরা পাঠকের কাছে তার চুম্বুকাংশ তুলে ধরলাম। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন শীলনবাংলা ডটকমের প্রতিবেদক সাজিদ সাজু।

শীলনবাংলা : আসসালামু আলাইকুম

আবু সুফিয়ান: ওয়ালাইকুমুস সালাম।

শীলনবাংলা : এখন কেমন আছেন?

আবু সুফিয়ান: আলহামদুলিল্লাহ্‌

শীলনবাংলা : আমরা আপনার কাছে জানতে চাই, আপনাকে কী কারণে জেলে যেতে হয়েছে? একটু খোলে বলবেন?

আবু সুফিয়ান : অনেক লম্বা কথা, আমার সাবেক কিছু সতীর্থদের গত ১ বছর ব্যর্থ চেষ্টা ও বহু টাকা খরচ করার পর বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় আমাকে জড়িয়ে জেলে পাঠিয়েছে, যেখানে হুমকি —ধমকি, ভাংচুর ও কথিত জালিয়াতের মামলায়ও ফাঁসানো হয়েছে।

শীলনবাংলা : আমরা জেনেছি, আপনি একটি স্বাক্ষর জালিয়াতির কারণে জেলে গিয়েছেন, আপনি কি নিজে এই স্বাক্ষর জাল করেছেন?

আবু সুফিয়ান : যে স্বাক্ষরটি জালের প্রশ্ন উঠেছে তা একজন সচিবের স্বাক্ষর! সচিব মহোদয় এ পর্যন্ত এ স্বাক্ষর জালের বিষয়ে কোন স্টেইটম্যান্ট দেননি, বরং আমার পিছু লেগে থাকা দুষ্কৃতকারীরা ইনিয়ে—বানিয়ে মন্ত্রণালয়ের এক সহকারীর স্টেইটম্যান্ট এনেছে, যা থানায় গ্রহণযোগ্য হয়নি, তারপর তারা আরও কিছু ধারা যোগ করে আমাকে জেলে পাঠাতে সক্ষম হয়। স্বাক্ষর জালের প্রশ্নই উঠে না, সচিব মহোদয়ও নিজ স্বাক্ষরের বিষয়ে অস্বীকার করেছে বলে কোন প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না, বরং মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অফিসে আমাদের কিছু ফাইল আটকে যাওয়ায় এ জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, আশাকরি দ্রুতই এ জটিলতা নিরসন হবে এবার ইনশাআল্লাহ।

শীলনবাংলা : দালালের কথা বলছিলেন, একজন শিল্পী হয়ে দালালের খপ্পরে কীভাবে পড়লেন? এতে কি কারও ষড়যন্ত্র আছে বলে মনে করেন?

আবু সুফিয়ান : দালালের বিষয় নয়, বরং আমাদের বিভিন্ন তথ্য সম্বলিত ফাইলগুলো এলেই এর সত্যতা বেরিয়ে আসবে ইনশাআল্লাহ।

শীলনবাংলা : পৃথিবীর বিখ্যাত সবাই জেল খেটেছেন। এই জেলবন্দী হওয়াটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

আবু সুফিয়ান : কোরআন—সুন্নাহর জন্য নবী রাসুল আকাবিররা জেল থেকেও অনেক নিপীড়ন সহ্য করেছে। এটা স্বাভাবিক মনে হয়েছে আমার কাছে। আর খুব বেশী বেশী মনে পড়েছে ইউসুফ আঃ—এর জেলের স্মৃতিগুলো

02

একটি অনুষ্ঠানে সঙ্গীত গাইছেন জাগরণী শিল্পী আবু সুফিয়ান

শীলনবাংলা : আপনি কি তাহলে কলরবকে ছেড়ে দিচ্ছেন? না হলে কী নামে অাপনি কাজ করবেন?

আবু সুফিয়ান : কলরব ছেড়ে দেয়ার প্রশ্নই আসে না। এটা আমার জীবনের একটি অংশ।এটা আমার অধিকার। আপনাদের দোয়া ভালোবাসা নিয়ে শেষ নিঃশাষ পর্যন্ত কলরব নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই ইনশাআল্লাহ।

শীলনবাংলা : ইমতিয়াজ মাসরুর, আহমদ আবদুর রহীম, হুমায়ুন কবির শাবিব, কাজী আমিনুল ইসলাম, বদরুজ্জামানসহ সবাই একসঙ্গে ছিলেন। ভালো কাজ করছিলেন। কিন্তু দ্বন্দ্বে জড়ালেন কেন আপনারা?

আবু সুফিয়ান : শিল্পী ইমতিয়াজ মাসরুর কখনই এক্টিভ ছিলেন না, তিনি দায়িত্বশীল হয়েছেন ২০১৭ সালে তবে মাঝে মাঝে কেন্দ্রীয় প্রোগ্রামগুলোতে উপস্থিত থাকতেন এবং আহমাদ আব্দুর রহিম ভাই আইনুদ্দীন ভাই চলে যাওয়ার পর থেকেই এ্যাক্টিভ না। ইসাস নামে একটি সংগঠন চালু করেছিলেন সাইদ আহমাদকে নিয়ে। পরে সাইদ পুনরায় কলরবে চলে আসেন। এবং দ্বন্দ্বে মূল বিষয় হচ্ছে একনায়কতন্ত্র আর কলরব নিয়ে ব্যবসার মহা উৎসবে মেতে উঠেছিলো আমাদের বদরুজ্জামান ফেরদৌসরা। যার ফলে, হুমায়ুন কবির শাবিব, কাজি আমিনও অনেক দূরে চলে গেছেন।

শীলনবাংলা : যাহোক, এই যে আলাদা আলাদা হয়ে কাজ করছেন, এতে কি মনে করেন—ভালো কাজ হওয়া সম্ভব? একত্রে থাকলে আরও ভালো কাজ হতো না।

আবু সুফিয়ান : আমি মনে করি আলাদা কাজে কোনো সমস্যা নেই। এতে অনেক বেশী কাজ পাবে ভক্তশ্রোতারা, তবে মানের দিকে খুব বেশী লক্ষ্য করতে হবে। আর একত্রের বিষয় বলছেন, এখানে মুল ফায়দা হচ্ছে ব্যবসা। যার কারণে আইনুদ্দীন ভাইয়ের সিনিয়র প্রকৃত শিষ্যদেরকে একেক করে মাইনাস করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন আড়ালের সিন্ডিকেটরা।

শীলনবাংলা : আপনার নিশ্চয়ই জুনাইদ জামশেদের কথা মনে পড়ে? তিনি চলে গেছেন। তাকে নিয়ে কাজ করতে, আন্তর্জাতিক হামদ—নাত মাহফিলে গাইতে কেমন লেগেছিল?

আবু সুফিয়ান : এটা প্রকাশ করার মত নয় প্রিয় জুনাইদ জামশেদকে কাছে পেয়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গন হেসে ওঠেছিলো বিজয়ের ভেসে।

শীলনবাংলা : আইনুদ্দীন আল আজাদকে আপনারা অনুসরণ করেন। বাস্তবে কি আপনারা আজাদের উদারতার চর্চা করতে পারছেন?

আবু সুফিয়ান : আমি ব্যক্তিগতজীবনে ও সাংগঠনিক প্রত্যেক কাজগুলোতেই আজাদ ভাইকে আইডল মনে করে কাজ করি এবং তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ইনশাআল্লাহ।

শীলনবাংলা : আইনুদ্দীন আল আজাদের কোন চরিত্রটা আপনাকে টানে?

আবু সুফিয়ান: তার সাহসী পদক্ষেপ ও ধৈর্য শক্তিগুলো।

শীলনবাংলা : আপনি এই সঙ্গীত জগতে কীভাবে উঠে এলেন? একটু খোলে বলবেন?

আবু সুফিয়ান : সেই ছোটবেলা থেকেই সংগীতে দুর্বল ছিলাম এবং আজাদ ভাইকে লালন করতাম। এবং চেষ্টাকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। এভাবেই ধীরে ধীরে।

শীলনবাংলা : আপনি কি মনে করেন, কলরবের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যানারে কাজ করছে। সবাইকে আবার এক প্লাটফর্মে নিয়ে আসা সম্ভব?

আবু সুফিয়ান : অবশ্যই সম্ভব কিন্তু ফেরদৌসি কলরবের উপদেষ্টা ও অভিভাবকদের চ্যাঞ্জ করলে সম্ভব নয়তো কিয়ামত পর্যন্ত সম্ভব নয়। এখানেই সব প্রশ্ন থেমে যায়, উত্তর খুঁজে পায় না কেউ। তবে সর্বদা প্রস্তুত ইনশাআল্লাহ।

শীলনবাংলা : আমাদের এই সুস্থ সংস্কৃতির অঙ্গন অনেক ছোট। প্রতিনিয়ত যেভাবে ঝগড়া বেড়েই চলেছে আপনার কি মনে হয়, মানুষকে আল্লাহর দিকে টানার মতো কাজ আমরা আঞ্জাম দিতে পারবো?

আবু সুফিয়ান : হ্যাঁ, সত্যি। সংস্কৃতি অঙ্গন নয় কেবল, এটাতো এখনো অনেক ছোট। ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর কথা ভাবেন।

শীলনবাংলা : আইনুদ্দীন আল আজাদ শাহাদাত লাভের আগে যেখানে কলরবকে রেখে গিয়েছিলেন সেখানে কলরব নেই। তখন যাদেরকে মঞ্চে দেখা যায়নি তারা এখন পরিচালনায়। এমন একটা খবর অনেকের মুখে শোনা যায়। তা কি সত্য?

আবু সুফিয়ান : কেউ কলরবের ব্যানারকে ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান বানিয়েছেন কেউ আবার ক্ষমতা প্রয়োগ করছেন। আর যাদেরকে পরিচালনায় দেখছেন আমার কাছে মনে হয় তারা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন।

শীলনবাংলা : বর্তমান পীর সাহেব চরমোনাই যদি আপনাদের মিলিয়ে দিতে উদ্যোগ গ্রহণ করেন তখন কি একসঙ্গে আবার কাজ করা সম্ভব?

আবু সুফিয়ান : অবশ্যই সম্ভব কিন্তু ফেরদৌসি কলরবের উপদেষ্টা ও অভিভাবক পরিষদ আগে চেঞ্জ করতে হবে। না হলে কিয়ামত পর্যন্ত সম্ভব নয়।

শীলনবাংলা : মাঠ ধরে রাখার জন্য আপনারা বেশি বেশি স্টেজ শো করেন। কিন্তু শিল্পীদের মান যে নষ্ট হয়—এটা কী আপনি সমর্থন করেন?

আবু সুফিয়ান : খুব সুন্দর একটি প্রশ্ন করেছেন। স্টেজ শোতে শিল্পীদের সাহস তৈরী হয়। আমি মনে করি বাংলাদেশীদের বিষয়টা একটু ভিন্ন, তারা শিল্পীর মুখে সরাসরি সংগীত শুনতেই পছন্দ করেন। সংগঠন এর দ্বারা অগ্রগামী হয়। সেটাও তো খারাপ নয়।

শীলনবাংলা : সাধারণ মানুষদের জন্য আপনি কী বলবেন?

আবু সুফিয়ান : ভালো থাকুন। হামদনাতকে ভালোবাসুন।

শীলনবাংলা : জেলখানার কোনো গল্প থাকলে আমাদের শোনাতে পারেন?

আবু সুফিয়ান : আরেকবার কখনো বলবো ইনশাআল্লাহ।

শীলনবাংলা : ধন্যবাদ

আবু সুফিয়ান : ধন্যবাদ জানাই শীলনবাংলাডটকমকে। শীলনের পাঠক, সুধী শুভাকাঙ্ক্ষী ও সকল দায়িত্বশীলদের।

 

শেয়ার করুন...

One response to “কলরব ছেড়ে দেয়ার প্রশ্নই আসে না, একান্ত সাক্ষাৎকারে আবু সুফিয়ান”

  1. Miraj Nadim says:

    এই প্রশ্নটা করলেননা কেন? যে, কলরব থেকে দাউদ আনাম আর আবির মাহমুদ আপনার সাথে এসে আবারও চলেগেলো কেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved 2018 shilonbangla.com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com