বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:০০ অপরাহ্ন

ইলম অর্জন ও ব্যক্তিত্ব গঠনে খরচ করতে অভ্যস্ত হও

ইলম অর্জন ও ব্যক্তিত্ব গঠনে খরচ করতে অভ্যস্ত হও

 ‘আল-ইনতিবাহ’ নামে ছাত্রদের একটি স্মারকে এই সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়েছে। উস্তাযদের সম্মিলিত সাক্ষাৎকার—এই উদ্যোগটা ভালো লাগল। এরকম নানা বিষয়ে সম্মিলিত সাক্ষাৎকার হলে দরকারি কাজ হয়। যাইহোক, সাক্ষাৎকারে হযরতুল আল্লাম আবুল বাশার মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সাহেবের কথার অংশটুকু এখানে তুলে ধরা হলো-

ইলম অর্জন ও ব্যক্তিত্ব গঠনে খরচ করতে অভ্যস্ত হও

মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম

‘বর্তমানে মাদরাসাগুলো জনগণের সাহায্য-সহযোগিতায় চলার যে পদ্ধতিটা দেখা যাচ্ছে, এটি মূলত আমাদের আকাবিরের তরিকার বিপরীত। দেওবন্দে কালেকশনের জন্য আলাদা মুহাসসিল আছে। এটি উস্তায-ছাত্রের কাজ নয়। আমাদের দেশে উস্তায-ছাত্রগণ এটি ব্যাপকভাবে আঞ্জাম দিয়ে থাকেন। কুরবানির সময় ছাত্রদের দিয়ে চামড়া কালেকশন করার বিষয়টি সবসময় আমাদের বিবেকে বাধে, আমাদের পীড়া দেয়। একই বাড়ির সামনে ছাত্র-উস্তায চামড়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন, ভিক্ষুকও দাঁড়িয়ে আছে গোশতের জন্য। বাড়িওয়ালা ভিক্ষুকদের ধমকাচ্ছেন, ছাত্র-শিক্ষকদেরও ধমকাচ্ছেন! এমনকি, বাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার ঘটনাও তো আমাদের সামনেই ঘটেছে। এমন দৃশ্য আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। এছাড়া আরও কত রকমের যে লাঞ্ছনাকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়, সেসব তো আমরা নিজের চোখেই দেখেছি। আবার অল্প সময়ে ভালো পরিমাণ অর্থ আয় হওয়াতে কমিটির লোকেরা এটি কোনভাবেই বন্ধ করতে সম্মত হয় না। তাছাড়া রমজান মাসে কালেকশনের জন্য শিক্ষকদের বাধ্য করার ব্যাপারটিও আমাদের মাদরাসাগুলোতে বিচিত্র নয়। কিন্তু সেই কালেকশন করতে গিয়ে তাদের মান-মর্যাদা ঠিক থাকবে কিনা তা দেখার যেন কেউ নেই।

হযরত থানভি রহ.-এর বক্তব্য ছিল, কোনো ছাত্র তো নয়ই, কোনো শিক্ষকও কালেকশন করতে যাবে না। এমনকি, এর জন্য যদি মাদরাসার সংখ্যা কমেও যায়, তো যাবে; তবু দীনের জন্য ভালো। তাই আমরা আমাদের এখানে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, ছাত্র-উস্তায সবার সম্মানই যেন সুরক্ষিত থাকে। কালেকশনের জন্য তারা মানুষের বাড়ি বাড়ি যাবে না। চামড়ার কালেকশন করবে না। তেমনিভাবে উস্তাযগণও রমজানে জাকাত কালেকশনের জন্য রশিদবই নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করবে না। হ্যাঁ, নিজের সম্মান রক্ষা করে যেটুকু করা যায়, তা করবেন। পারলে করবেন, না পারলে করবেন না—কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। অর্থনৈতিক বিষয়টি সামনে রেখে আমরা তালিমগ্রহণে আকাবির ও আসলাফের যে চেতনা ও পদ্ধতি ছিল, সেটি ফিরিয়ে আনার চিন্তা করছি। অর্থাৎ ইলম শিক্ষার জন্য ছাত্র তার সাধ্যমতো খরচ করবে; যেমনটি সালাফের যামানায় ইলম হাসিলের যাবতীয় খরচ শিক্ষার্থী নিজে বহন করত। কারও কারও জীবনীতে তো এও পাওয়া যায় যে, বাবার রেখে যাওয়া বিপুল সম্পদের পুরোটাই ইলমের পথে ব্যয় করে দিয়েছেন। তাই আমাদের চিন্তা হলো, প্রতিষ্ঠান নয়, শিক্ষার্থী নিজেই নিজের খরচ বহন করবে।

সাধারণত আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ম হলো, নির্ধারিত নম্বর পেলে মাসিক প্রদেয় মওকুফ হয়ে যায়। কিন্তু আমরা এই ফিকির সামনে রেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, মাসিক প্রদেয় ফ্রি হওয়ার সম্পর্ক থাকবে সামর্থ্যরে সঙ্গে, নম্বরের সঙ্গে নয়। আর নম্বর বিবেচ্য হবে কেবল ভর্তির ক্ষেত্রে। নম্বর পেলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবে, নইলে পাবে না। এর অর্থ এই নয় যে, এখানে কেবল ধনীরাই সুযোগ পাবে, অন্যরা পাবে না। বরং ধনী-গরীব নির্বিশেষে সবার জন্যই এখানে অবারিত সুযোগ থাকবে। তবে, প্রত্যেকেই সাধ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে। স্বচ্ছলতা নেই বলে যে সে কিছুই দেবে না, এমন যেন না হয়। যে যতটুকু পারবে ততটুকুই দেবে, বাকিটা প্রতিষ্ঠান বহন করবে। খরচ করতে অভ্যস্ত হওয়া যেমন ইলমের জন্য দরকার, তেমনই নিজের ব্যক্তিত্ব গঠনের জন্যও দরকার। এ অভ্যাস না থাকলে ব্যক্তিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় না।

একজন লোক যত বড়ই হোক না কেন, যদি তার মাঝে অন্যকে দেওয়ার অভ্যাস গড়ে না উঠে, কেবল গ্রহণ করেই সন্তুষ্ট থাকে, তাহলে কোনদিনই তার মানসিকতা বড় হয় না। তার প্রতি মানুষের ভক্তি-শ্রদ্ধা জন্মায় না। মানুষ তাকে শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখে না। সমাজে সে কোনও প্রভাব রাখতে পারে না, অর্থ-বিত্তের সামনে গলে যায়। এজন্য কেবল যোগ্যতাই যথেষ্ট নয়, যোগ্যতা ব্যবহারের জন্য এই ব্যক্তিত্বটুকুও অত্যন্ত জরুরি।’

-শাইখুল হাদিস, জামিয়াতুল উলূমুল ইসলামিয়া ঢাকা

শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved 2018 shilonbangla.com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com