প্রায় মলিন আলখেল্লা পরে মুখে হাসি চাপিয়ে একজন আলেম হেটে চলছেন গ্রামের রাস্তা দিয়ে। উনার পেছনে পেছনে শিশু কিশোরদের মিছিল। কারণ ওই মাওলানার বগলে চেপে রাখা কাপড়ের ব্যাগে চকলেট থাকে। তিনি কিছুক্ষণ পর পর ব্যাগ খুলে শিশুদের চকলেট দিতেন, এইজন্য।
তিনি ছিলেন আমার পিতা মাওলানা ফয়জুর রহমান রহ। সেই ছোটবেলা থেকেই এই দৃশ্য দেখতে দেখতে বড় হয়েছি।
আমার আব্বা শিশুদের চকলেট দিয়ে মাদ্রাসামুখী করতেন, বড়দেরকে ছোট ছোট ইসলামী বই পুস্তক, দোয়ার বই গিফট করতেন, এবং এখানেও উদ্দেশ্য থাকত মাদ্রাসার শুভাকাঙ্ক্ষী বৃদ্ধি করা। অবশ্য তার এই চরিত্রের কারণে মূল নাম ঢাকা পড়ে সবাই ডাকত সুফি সাহেব বলে।
মরহুম সুফি সাহেব ইন্তেকাল করেছেন প্রায় চার বছর হতে চললো। কিন্তু তার রেখে যাওয়া আতহারুল উলুম আদিনাবাদ মাদ্রাসা এখনো আছে আলহামদুলিল্লাহ।
আদিনাবাদ মাদ্রাসার আজ বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল। মাহফিলের আগেই শুধুমাত্র ইউকে এবং আমেরিকা প্রবাসীদের উদ্যোগে মাদ্রাসার আটটি কক্ষ ইতিমধ্যে তৈরি করার কাজ শুরু হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকার মুরুব্বি ও যুবকদের মাদ্রাসার প্রতি আগ্রহ বিস্ময়কর। আল্লাহ কবুল করুন তাদের পরিশ্রম।
আমি ঢাকায় থাকি। কিন্তু আমাকে এলাকার জনগন মুহতামিম হিসেবে এখনো কেনো রেখেছেন জানিনা৷ আমি জানি আমি এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের উপযুক্ত না।
আমাদের গ্রামগুলোয় পূর্ববর্তী উলামায়ে কেরাম একেকটি মাদ্রাসা, একেকটি মক্তব তৈরি করে গিয়েছেন। একেকটা মক্তব, একেকটা মাদ্রাসা একেকটা আলোর বাতিঘর। সবাই ঘুমিয়ে পড়লেও বাতিঘর জেগে থেকে আলো দেখায় সমাজ ও সভ্যতাকে।
লেখক : কথাসাহিত্যিক
Leave a Reply