মুস্তাকিম আল মুনতাজ
সম্প্রতি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা-ের মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। শুধু সীতাকুণ্ডে নয়, পাবনা ও ঢাকার মধ্যবাড্ডায়ও অগুনের লেলিহানে পুড়ে ছারখার হয়েছে সবকিছু। ফলে পুরো দেশ আজ শোকাহত। নিহত ও আহত ব্যক্তিদের আত্মীয়-স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠেছে। দেশজুড়ে চলছে শোকের মাতম। সীতাকুণ্ডের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান এর দেওয়া সর্বশেষ তথ্য মতে, বিস্ফোরণ ও আগুনে ৯ ফায়ার ফাইটারসহ ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪১ জনের লাশ চমেক হাসপাতালে আছে। ভয়াবহ এ আগুনে দগ্ধ ও আহত হয়ে হাসপাতালের বিছানা কাতরাচ্ছেন দেড় শতাধিক মানুষ। এর মধ্যে গুরুতর কয়েকজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ২২ জনের পরিচয় শনাক্ত হওয়ায় স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া অন্যদের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষা করবে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। (সূত্র: দৈনিক সময়ের আলো, ৬ই জুন, সোমবার)
দেশে আগুনে পুড়ে মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। প্রায়শই দেশের কোথাও না কোথাও এমন ঘটনা ঘটে। কিছু ঘটনা বিরাটাকার ধারণ করে, আর কিছু ঘটনা মানুষের অজানাই থেকে যাই। আর এসব আগুনের থাবায় বিলীন হয়ে যায়Ñ মানুষের হাজারো স্বপ্ন। তেমনি এক ঘটনা সীতাকু-ে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা-ের। যারা নিহত হয়েছেন তাদের পিতা-মাতা কিংবা সন্তানদের ধৈর্য ধারণ করাটা খুবই কষ্টকর। আর যারা আহত হয়েছেনÑজীবনের শেষতক পর্যন্ত কষ্ট ভোগ করে যেতে হবে, যা একজন মানুষের পক্ষে অনেকটা কষ্টসাধ্য।
এমন কষ্টের মধ্যে তখন ধৈর্য ধারণ করা উত্তম। আর যারা ধৈর্য ধারণ করতে পারে, তারা দুনিয়া ও আখেরাতে সফলকামী। কেননা, ধৈর্যশীলদের সঙ্গে স্বয়ং আল্লাহ থাকেন এবং ধৈর্যশীলদের জন্য রয়েছে অপরিমিত প্রতিদান। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, “নিশ্চয়ই আমি তোমাদের কিছু ভয় ও ক্ষুধা দ্বারা এবং কিছু ধনপ্রাণ ও ফলের (ফসল) লোকসান দ্বারা পরীক্ষা করব; আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।” (সুরা বাকারা : ১৫৫)। হজরত আবু মুসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. ইরশাদ করেন, ‘যখন কারও সন্তান মারা যায় তখন আল্লাহ ফিরিশতাদের ডেকে বলেন, “যে তোমরা আমার বান্দার সন্তানের জান কবজ করে ফেলেছ? তারা বলেন, হ্যাঁ। আল্লাহ বলেন, তোমরা তার কলিজার টুকরার জান কবজ করে ফেলছ? তারা বলেন, হ্যাঁ। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা কী বলছে? তারা বলেন, আপনার বান্দা এই বিপদেও ধৈর্য ধারণ করে আপনার প্রশংসা করেছে এবং ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়েছে। আল্লাহ বলেন, তোমরা আমার এই বান্দার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ কর এবং তার নামকরণ কর বাইতুল হামদ তথা প্রশংসার গৃহ।’ (মিশকাতুল মাসাবীহ ও তিরমিজি তৃতীয় খন্ড)।
সীতাকু-ের নির্মমভাবে আগুনে পুড়ে যারা নিহত হয়েছেন তারা অবশ্যই শহীদের মর্যাদা পাবেন। কেননা, রাসুল (সা.) শহীদদের সঙ্গা দিতে গিয়ে বলেন, আল্লাহর পথে নিহত হওয়া ব্যতীত সাত ধরনের শহীদ রয়েছেÑ যথা: (১) মহামারীতে মৃত ব্যক্তি (২) পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি (৩) শয্যাশায়ী অবস্থায় যে মারা যান সেও শহীদ (৪) কলেরা বা পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি (৫) আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তি (৬) ভূমি বা ভবন কিংবা দেয়াল ধসে চাপা পড়া মৃত ব্যক্তি (৭) যে নারী গর্ভধারণে বা প্রসবজনিত কষ্টে মারা যায় তাকেও ইসলামে শহীদি মর্যাদায় ভূষিত করবেন।’ (আবু দাউদ)। উক্ত হাদিস থেকে সহজেই বুঝা যায়, সীতাকু-ে নয়, পাবনা ও ঢাকার মধ্য বাড্ডার অগ্নিতে পতিত হয়ে যারা নিহিত হলেন, তারা আল্লাহর দরবারে শহীদি মর্যাদা পাবেন, ইনশাআল্লাহ।
আসুন! আগুনে পুড়ে যারা নিহত হয়েছেন, তাদের জন্য আমরা দু’আ করি। আল্লাহ তা’য়ালা যেন তাদেরকে ক্ষমা করে জান্নাতুল ফেরদাউস এবং তাদের পরিবার পরিজনকে ধৈর্য ধারণ করার তাওফিক দান করেন। পাশাপাশি যারা আহত হয়েছেন, সেসব ব্যক্তি ও তাদের পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াই। বাড়িয়ে দেই-সহযোগিতা কিংবা সহমর্মিতার হাত। কেননা, মানুষ মূলত মানুষের জন্যই।
লেখক : আলেম ও প্রাবন্ধিক, শিক্ষার্থী, শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ।
mustakimmuntaj18@gmail.com
Leave a Reply