শনিবার, ২৭ মে ২০২৩, ০২:১০ অপরাহ্ন

অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ থাকে না | আবিদ রাজু

অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ থাকে না | আবিদ রাজু

ছবি : আবিদ রাজু

অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ থাকে না | আবিদ রাজু

বহু আগে থেকেই আমি ভোগবাদী মানুষ, দুঃখ-কষ্টরে পাত্তা দেইনা। দেশও দশ গোল্লায় গেলেও চুপ কইরা থাকি। পাপকে ঘৃণা করে পাপির পাশ কাইটা চইলা যাই। ভোগবাদী মানুষ হলেও হাদিসে আমার আমল আছে। হাদিসে আছে, অন্যায় দেখলে হাতে, মুখে বা মনে মনে ঘৃণা কর। আমি দুর্বল চিত্তের, তাই মনে মনে ঘৃণা করি। হাতে বা মুখে প্রতিবাদ করিনা ব্যক্তি সুবিধা বিনষ্ট হওয়ার ভয়ে।

তবে মাঝেমধ্যে স্বার্থবাজিতার এই বানিজ্যের ব্যপকতা দেখে ডরও লাগে। কেননা অন্যায় অবিচার যখন সীমা অতিক্রম করে, তখন আল্লাহর গজব আসে ঢালাওভাবে। সেই গজব ঈমানদার আর বেঈমান দেখে না, সমানে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। কবি বলেছেন,

“অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ থাকে না।” চুপ থাকার শাস্তি না জানি কবে নেমে আসে! অন্যায়-অবিচার, জুলুম- নির্যাতনের বিরুদ্ধে চুপ থাকার শাস্তিই কি দিচ্ছে আল্লাহ বিশ্ববাসীকে করোনা দিয়ে, আমার সন্দেহ হয়!

তো যাইহোক, যতই নিজেরে ভোগবাদী বলে দাবী করিনা কেন, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে যখনই কোন অন্যায় বা অসহায়েত্বের নীরব সাক্ষী হয়ে যাই, খুব খারাপ লাগে। কিচ্ছু করতে না পারার কষ্টে বুক ভেঙ্গে কান্না আসে।

প্রতিবাদী মন চুরমার করে দিতে চায় সব অনাচার।

বিদ্রহী হয়ে ওঠে জুলুমবাজদের উপর। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেরে সংবরণ করি বেঘোরে প্রাণ হারাবার ভয়ে।

মনরে বুঝাই-‘ ইগনোর কর ইগনোর কর, তুই হলি ভোগবাদী কবি, গণতন্ত্রীয় ঝামেলায় পড়া তোর সাজে না। মানবতাবাদ গোল্লায় যাক, ভোগবাদ জিন্নাবাদ!’

তবু বেহায়া মন বুঝতে চায় না। অসহায়ের দরদে ডুকরে কেঁদে ওঠে। ক্ষুধার্ত মানুষের চোখে চোখ রাখতে পারেনা লজ্জায়। রোগে-শোকে হাড্ডিসার কৃষকের বিছানার পাশে বসে উদাস মনে আকাশপানে চেয়ে থাকে কিছুই করতে না পারার অক্ষমতায়। মন গালি দেয়- মাটি হয়ে যা কবি, মাটি হয়ে যা। তোর জন্ম নেয়া বৃথা কুত্তার বাচ্চা। বাল ফালানো কবি হইছিস! প্রেমের কবিতা চুদাইস, মানব প্রেমে যদি তোর দিল না জাগে, তাহলে কিসের বালের কবি তুই! কোন প্রেমের আলাপ করিস ছন্দে কবিতায়?

মন যখন এতোই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে, তখন খানিকক্ষণ চুপ থাকি। মনের পায়ের কাছে বসে থাকি যেমন বসে থাকে অনুগত কুকুর তার মনিবের পায়ের তলায়।

সময় বয়ে যায়, আস্তে আস্তে সুযোগ বুঝে লজিক দিয়ে মনরে বুঝাই। বলি মনরে..,

সমাজ সংস্কার, অসহায়ের পাশে দাঁড়ানো, শোষণের বিরুদ্ধে সুশাসনের আওয়াজ তোলা,এগুলো অনেক বড় ফিকির। বিরাট ত্যাগি কাজ। শুধু শব্দযুদ্ধে এ ঠিক হবার নয়, চাই সশস্ত্র প্রচেষ্টা। কিন্তু এই কথাটা কইতে গেলেই তো এই পুজিবাদী রাষ্ট্র শুরুতেই টুটি চেপে ধরবে। প্রাণটা যাবে বিফলে। অথচ জান বাচানো ফরজ। পরিবারে মা বাবা স্ত্রী সন্তান আছে, তাদের কথাও তো চিন্তা করতে হবে। তুই তামাম দুনিয়া নিয়া ফিকির করলে তোর বউ বাচ্চার ফিকির করবে কে?

তাছাড়া পুজিবাদী গণতন্ত্রের সংবিধানই হচ্ছে “শোষণ ছাড়া শাষণ চলে না! ” আর এই মতবাদ আজ গোটা বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত। তাইলে এই বৈশ্বিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে তুই চুনোপুঁটির ফিকিরে কী আর উদ্ধার হবে!

শোন মন, এতো বিবেক বিবেক করে লাভ নেই। ‘ বিবেকবানের সুখ মরে যায়। সুখি হতে হলে বিবেকহীন হতে হয়। ‘ যা হবার তা হবেই। খোদার ইনসান খোদাই বাঁচাবে, খোদাই মারবে। আগত দিন আর গত হওয়া কাল সবই তার ডায়েরিতে লেখা।

এভাবেই দায়সারা যুক্তির বেড়াজালে দিনশেষে নামে অন্ধকার। সততার উপর বিজয়ী হয় ভোগবাদী মন আমার।’
নির্বাণ লাভ করেছি- বলে বলে প্রশান্তি খুঁজি নিরপেক্ষ দর্শকের ভূমিকায়। আর সুখ খুঁজি নারী নিকোটিন ও সারাবান নাজাছাতে।

চিন্তার প্যারা শেষে স্বার্থের আলাপে আসলেই স্লোগান ওঠে… ‘ মানবতাবাদ গোল্লায় যাক, ভোগবাদ জিন্দাবাদ!’

লেখক : কবি

শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved 2018 shilonbangla.com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com